আন্তর্জাতিক সিনেমার এক অনন্য মুখ, দর্শকপ্রিয় জার্মান অভিনেতা উডো কিয়ার আর নেই। রবিবার, ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। কিয়ারের সঙ্গী, শিল্পী ডেলবার্ট ম্যাকব্রাইড তাঁর মৃত্যুর খবরে সিলমোহর দিয়েছেন। পাঁচ দশকেরও বেশি দীর্ঘ কেরিয়ারে কিয়ার যে ছাপ রেখে গেছেন, তা একই সঙ্গে ছিল ব্যতিক্রমী, অদ্ভুত, শিল্পসম্মত এবং একেবারে আইকনিক।
১৯৭৩-৭৪ সালে পল মরিসি ও অ্যান্ডি ওয়ারহল-এর ‘ফ্লেশ ফর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ এবং ‘ব্লাড ফর ড্রাকুলা’-তে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন কিয়ার। তাঁর অভিনয় ছিল কখনও অস্বস্তিকর, কখনও হাস্যরসাত্মক, আবার কখনও অদ্ভুতভাবে চুম্বকীয়। পর্দা থেকে দর্শককে চোখ ফেরাতে দিতেন না এক মুহূর্তের জন্যও। সেই দু’টি ছবিই তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে এক ‘ভুলতে না পারা’ স্ক্রিন-পার্সোনায়।
এরপর সাত ও আটের দশকে ইউরোপীয় সিনেমায় প্রায় স্থায়ী হয়ে ওঠেন তিনি। জার্মান অট্যুর রেইনার ভার্নার ফাসবিন্ডারের সঙ্গে ‘দ্য স্টেশনমাস্টার’স ওয়াইফ’, ‘দ্য থার্ড জেনারেশন’ ও ‘লিলি মার্লিন’-এর মতো ছবিতে কাজ করে তিনি এক অনন্য জায়গা দখল করেন। কিয়ার-এর অভিনয়ের বিশেষত্ব, তিনি একই সঙ্গে সিরিয়াসনেস এবং অদ্ভুত রকমের আইরনিকে এমনভাবে মিশিয়ে দিতেন, যা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না।
নয়ের দশকের শুরুতে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গাস ভ্যান সেন্ট-এর সঙ্গে দেখা হওয়া তাঁর কেরিয়ারের নতুন অধ্যায়। ভ্যান সেন্ট তাঁকে মাই প্রাইভেট ইডাহো-তে কিয়ানু রিভস ও রিভার ফিনিক্সের সঙ্গে কাস্ট করেন। এর মধ্য দিয়েই আমেরিকান দর্শক প্রথমবার তীব্রভাবে চেনে উডো কিয়ারকে। প্রায় একই সময়ে ডেনিশ পরিচালক লার্স ভন ত্রিয়ের-এর সঙ্গে শুরু হয় তাঁর আরেক মহাগুরুত্বপূর্ণ যাত্রা। ‘ইউরোপা’, ‘ব্রেকিং দ্য ওয়েভস’, ‘ড্যান্সার ইন দ্য ডার্ক’, ‘ডগভিলে’, ‘মেলানকোলিয়া’, ‘নিম্ফোম্যানিয়াক: ভলিউম ২’-ত্রিয়েরের প্রায় সব বড় কাজেই ছিলেন কিয়ার। এই সহযোগিতা তাঁকে নতুন মাত্রা দেয় আন্তর্জাতিক আর্টহাউস পরিসরে।
অন্যধারা থেকে মূলধারা -দুই ঘরানার ছবিতেই তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। তাই হলিউডও নজর করে। এসে ভেঞ্চুরা: পেট ডিটেকটিভ, আর্মাগেডন, ব্লেড-সব জায়গায়ই দেখা যায় তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি। ম্যাডোনার বই সেক্স এবং ইরোটিকা র মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করেন তিনি। শেষ কয়েক বছরে কিয়ার আবারও প্রমাণ করেন তাঁর অভিনয়শক্তি কমেনি। ক্লেবার মেন্দোনা ফিলহোর দ্য সিক্রেট এজেন্ট-এ তাঁর কাজ প্রশংসিত হয় ২০২৫ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে।
ছবির জগৎ আজ হারালো তার সবচেয়ে অদ্ভুত, সবচেয়ে অনন্য, আর সবচেয়ে অবিস্মরণীয় চরিত্র-অভিনেতাদের একজনকে।
