আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের বিমান পরিবহনে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা চলার সপ্তম দিনেও ইন্ডিগোর পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। সোমবারও দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিল হচ্ছে। দিল্লি বিমানবন্দর যাত্রীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, সংস্থার পরিষেবা আরও কিছুদিন ব্যাহত থাকতে পারে।

রবিবার ইন্ডিগো ৬৫০টিরও বেশি বিমান বাতিল করেছে, যদিও দু’দিন আগের তুলনায় এ সংখ্যা কিছুটা কম। সংস্থা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের ৬১০ কোটি টাকার বেশি ফেরত দেওয়া হয়েছে। কোম্পানির দাবি, পাইলটদের বিশ্রাম সংক্রান্ত নতুন সরকারি নিয়ম (FDTL) কার্যকর হওয়ায় পাইলট সংকট তৈরি হয়, যার জেরেই ফ্লাইট বাতিলের মাত্রা বেড়ে যায়। সংকট নিয়ন্ত্রণে না আসায় সরকার শেষ পর্যন্ত নিয়ম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

ফ্লাইট বাতিলের জন্য দায় নির্ধারণ করতে DGCA ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স এবং অ্যাকাউন্টেবল ম্যানেজার ইসিদ্রো পোরকেরাসকে শো-কজ নোটিশ দিয়েছে। তাঁদের সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে জবাব দেওয়ার জন্য। নাগরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির দায় ইন্ডিগোকেই নিতে হবে, কারণ নিয়ম পরিবর্তনের ঘোষণা এক বছর আগেই করা হয়েছিল।

সরকার ইতিমধ্যে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে নির্দেশ দিয়েছে, দ্রুত রিফান্ড নিশ্চিত করতে বলেছে এবং পুরো ঘটনার তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। শনিবার পর্যন্ত যাত্রীদের হারানো ৩,০০০-এর বেশি লাগেজ ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ইন্ডিগো জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে এবং ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে পারে।

গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন শহরে ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। শুধু শনিবারই ১০০-র বেশি বিমান বাতিল হওয়ায় যাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়েন। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সংস্থাটি গত শুক্রবার বড়সড় 'সিস্টেম রিবুট' করে। এর ফলে ৫ ডিসেম্বর ইন্ডিগো মাত্র ৭০০-র কিছু বেশি বিমান চালায়। রিবুট চলাকালীন বহু রুটে পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। ফলে একদিকে বাতিল বিমান, অন্যদিকে সময় বদল- সব মিলিয়ে যাত্রীদের নাভিশ্বাস অবস্থা হয়।ইন্ডিগো-র দাবি, একটানা সমস্যা চলতে থাকায় নেটওয়ার্ক, সময়সূচি ও স্টাফ রস্টার নতুন করে সাজানো ছাড়া উপায় ছিল না। তাই একদিনের জন্য এত সংখ্যায় বিমান বাতিল করে পুরো সিস্টেম রিসেট করা হয়। তাতেই শনিবার থেকে পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।আগেই যাত্রীদের কাছে এই অসুবিধার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে, খুব দ্রুত পুরো নেটওয়ার্কে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।

কেন্দ্রের নির্দেশ:
বাতিল হওয়া সব বিমানের রিফান্ড প্রক্রিয়া রবিবার রাত ৮টার মধ্যে যে কোনও পরিস্থিতিতেই শেষ করতে হবে। সময়সীমা মানতে ব্যর্থ হলে নিয়ম মেনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক শনিবারই ইন্ডিগোকে এ কথা জানিয়েছিল। ইন্ডিগোকে আরও বলা হয়েছে, যাত্রীদের সহায়তার জন্য ‘ডেডিকেটেড প্যাসেঞ্জার সাপোর্ট অ্যান্ড রিফান্ড ফেসিলিটেশন সেল’ তৈরি করতে হবে। এই বিশেষ সেলই সরাসরি যোগাযোগ করবে যাত্রীদের সঙ্গে এবং নিশ্চিত করবে যাতে বারবার যাত্রীদের টাকা ফেরত পেতে বারবার যোগাযোগ করতে না হয়। রিফান্ড এবং বিকল্প ভ্রমণ ব্যবস্থা দু’টোই দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।