আজকাল ওয়েবডেস্ক: হরিয়ানার ভোটার তালিকা নিয়ে নতুন বিতর্কে উত্তাল রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন, ব্রাজিলের এক মডেলের ছবি হরিয়ানার ভোটার তালিকায় ২২ বার ব্যবহৃত হয়েছে। তাঁর সেই দাবি ঘিরে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠতেই নতুন তথ্য সামনে আনল। তদন্তে জানা গেছে, একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এমন এক ভোটারের পরিচয়পত্রেও, যিনি মারা গেছেন ২০২২ সালের মার্চ মাসে।
তদন্তে প্রকাশ, মৃত ওই মহিলার নাম গুনিয়া, স্বামী বিনোদ। গুনিয়ার পরিবার জানিয়েছে, তিনি প্রায় আড়াই বছর আগে মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর নাম এখনও ভোটার তালিকায় রয়ে গেছে— এবং তাতেই দেখা যাচ্ছে এক বিদেশি নারীর ছবি। গুনিয়ার শাশুড়ি বলেন, “আমরা হতবাক। কীভাবে এমন হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না।” তিনি গুনিয়ার মৃত্যু সার্টিফিকেটও সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, মৃত্যুর আগে গুনিয়া ভোট দিয়েছিলেন, কিন্তু তার পর তাঁর নামে ব্রাজিলিয়ান মডেলের ছবি কীভাবে যুক্ত হলো, তা তাঁদের অজানা।
রাহুলের অভিযোগ: “ভোট চুরি হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে”
বুধবারের এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী দাবি করেন, হরিয়ানার ভোটার তালিকায় বৃহৎ পরিসরে জালিয়াতি হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এক ব্রাজিলিয়ান মডেলের ছবি ব্যবহার করে ভুয়ো ভোটার তৈরি করা হয়েছে— কখনও ‘সীমা’, কখনও ‘সুইটি’, আবার কখনও ‘সরস্বতী’ নামে। তিনি বলেন, “হরিয়ানার মোট ভোটার সংখ্যা দুই কোটি। এর মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ নাম জাল। মানে প্রায় ১২ শতাংশ ভোটারই ভুয়ো।”
রাহুলের অভিযোগ, এটি বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের “সম্মিলিত ষড়যন্ত্র”, যার উদ্দেশ্য কংগ্রেসের জয় কেড়ে নিয়ে বিজেপিকে জিতিয়ে দেওয়া। তিনি একে “systemic manipulation” বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, “এটা সাধারণ ভুল নয়, পরিকল্পিত ভোট চুরি।”
লারিসার প্রতিক্রিয়া: “আমার ছবিটা ব্যবহার হয়েছে, আমি জড়িত নই”
এই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা ব্রাজিলিয়ান নারী লারিসা নিজে অবশেষে মুখ খুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমার ছবিটা আমার প্রাথমিক মডেলিং দিনের পুরনো একটি স্টক ফটো। কেউ সেটা কিনে ব্যবহার করেছে, কিন্তু আমি কোনোভাবেই জানতাম না।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সঙ্গে ভারতের রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমি কখনও ভারতে যাইনি। আমি একজন ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার ও হেয়ারড্রেসার। ভারতীয় মানুষদের আমি ভালোবাসি, কিন্তু দয়া করে বুঝুন— ওটা আমি নই, শুধু আমার ছবি।”
লারিসা জানান, রাহুল গান্ধীর সাংবাদিক সম্মেলনের পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে হঠাৎ ভারতীয় ফলোয়ারের ঢল নামে। “আমার পোস্টে শত শত ভারতীয় মন্তব্য করছেন— কেউ কেউ লিখছেন যেন আমি নির্বাচনে জিতেছি! এটা বেশ মজার, কিন্তু আমি সবাইকে জানাতে চাই, সেটা আমি ছিলাম না,” বলেন তিনি হাসিমুখে।
তিনি আরও যোগ করেন, “ভারতের মানুষ যেভাবে সৌজন্য দেখিয়েছেন, আমার ভিডিও অনুবাদ করেছেন, গল্প শেয়ার করেছেন— তাতে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমি ভারতীয়দের ভালোবাসি, যদিও আপনাদের ভাষা আমি বুঝি না।”
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ভোটার তালিকা এবং ছবির উৎস খতিয়ে দেখার জন্য অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। কংগ্রেস দাবি করছে, এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে হরিয়ানায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের কারচুপি হয়েছে। বিজেপি অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, এটি “ডিজিটাল ত্রুটি” বা সফটওয়্যারের ভুল ছাড়া কিছু নয়। তবে বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, “একজন মৃত নারী, এক বিদেশিনীর ছবি, আর ২৫ লক্ষ ভুয়ো ভোটার— এটাই নতুন ভারতের ভোটব্যবস্থার চিত্র।”
এই ঘটনায় শুধু রাজনীতি নয়, নির্বাচন কমিশনের প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাহুল গান্ধীর অভিযোগ এবং লারিসার ভিডিও বার্তা মিলিয়ে পুরো ঘটনা এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে। যতক্ষণ না কমিশন স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়, হরিয়ানার ভোটার তালিকার এই অদ্ভুত রহস্য ঘিরে রাজনৈতিক তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।
