আজকাল ওয়েবডেস্ক: সরকারি প্রকল্পের নামে বিগত বছরগুলোতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করেছিল বিজেপি! এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে একাধিক তথ্যের অধিকার আইনের আবেদনের উত্তরে। দ্যা ওয়্যার-এর এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে, চেন্নাইয়ের প্রবীণ সাংবাদিক এবং সত্যম টিভির নিউজ এডিটর বি. আর. অরবিন্দাক্ষণ জানান, বিজেপির NaMo অ্যাপ ও narendramodi.in পোর্টালে এখনও পর্যন্ত স্বচ্ছ ভারত, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও এবং কিষাণ সেবা'র মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামে আর্থিক অনুদানের অপশন দেখানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলি স্পষ্ট জানিয়েছে যে এই প্রকল্পগুলির জন্য তহবিল সংগ্রহের কোনও অনুমতি বিজেপিকে দেওয়া হয়নি।

২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডা ‘মাইক্রো ডোনেশন ক্যাম্পেইন’ শুরু করেন। দাবি ছিল এই ক্যাম্পেইন বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও নিজের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এই উদ্যোগকে সমর্থন করেন এবং নিজে ১,০০০ টাকা অনুদান দেওয়ার স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। কিন্তু যখন সাধারণ মানুষ NaMo অ্যাপ বা narendramodi.in–এ গিয়ে অনুদান দেওয়ার সময় দেখেন সেখানে তাদেরকে সরকারি প্রকল্পগুলির মধ্যে থেকে একটি  নাম বেছে নিতে বলা হচ্ছে। যারা প্রকল্প বেছে নিয়ে অনুদান দেন, তাদের ইমেলে যে রসিদ আসে, তাতে দেখা যায় অর্থটি আসলে বিজেপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তহবিলে গেছে।

অরবিন্দাক্ষণ নিজেও তিনটি আলাদা  প্রকল্পে ১০০ টাকা করে অনুদান দিয়ে দেখেন তিনটি রসিদই বিজেপির নামে এসেছে। এরপর তিনি ২০২২ সালের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে তিনটি মন্ত্রকে  তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন করেন। জল শক্তি মন্ত্রক থেকে জানায়, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের জন্য NGO বা কোনও ব্যক্তির তহবিল সংগ্রহের কোনও আইন নেই। মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক স্পষ্ট জানায়—NaMo অ্যাপের মাধ্যমে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’র  জন্য অনুদান তোলার কোনও অনুমতিই নেই। যদিও কৃষি মন্ত্রক প্রথমে তথ্য দিতে অস্বীকার করে, পরে আবেদন করলে তারা জানায় কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের জন্য কোনও অ্যাপের নামে তহবিল সংগ্রহ করে না এবং এই ধরনের উদ্যোগগুলিকে তারা অনুমোদনও করে না।

ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক (MeitY) তাঁর আবেদন প্রধানমন্ত্রীর পাঠিয়ে দেয়। PMO-ও জানায় যে প্রধানমন্ত্রীর নামে কোনও সরকারি অ্যাপ নেই এবং NaMo অ্যাপের সঙ্গে PMO–র কোনও নথিবদ্ধ যোগাযোগই নেই।

এই সব তথ্য সামনে আসার পর অরবিন্দাক্ষণ চেন্নাই পুলিশ কমিশনার ও সিবিআই–এর আঞ্চলিক দপ্তরে ২০২৫ সালের ৮ ডিসেম্বর  লিখিত অভিযোগ জানান।  নাগরিকদের ভুল পথে পরিচালিত করে সরকারি প্রকল্পের নামে অনুদান আদায় করা হয়েছে, অথচ অর্থ গেছে একটি রাজনৈতিক দলের তহবিলে, অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বিজেপি সভাপতি নাড্ডাকেও চিঠি লিখে জানতে চান কত অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা সরকারকে দেওয়া হয়েছে কি না, যার কোনও উত্তর তিনি পাননি।

অরবিন্দাক্ষণ মনে করেন, এই ঘটনায় ঠকবাজি, অপরাধ, বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র, এমনকি প্রয়োজনে প্রিভেনশন অফ করাপশন অ্যাক্ট ও প্রতিনিধিত্ব আইন-এর ধারাতেও মামলা লাগু হতে পারে। তাঁর বক্তব্য—“যদি কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা না নেয়, আমি আদালতে যাব।”

দ্যা ওয়্যার-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই গোটা বিষয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং জে.পি. নাড্ডার কাছে প্রশ্ন পাঠিয়েছে তারা। কিন্তু তাদের প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বিজেপির তরফে।