আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিআইটিএস পিলানি’র গোয়া ক্যাম্পাসে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে তাঁরই হোস্টেলের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। শনিবার অর্থাৎ ১৬ আগস্ট সকালে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছাত্রটি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। নিজের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছেন। এই ঘটনা জানাজানি হতে হুলুস্থুল চারিদিক৷ 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ সম্পূর্ণ  ঘটনাটিকে একটি স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হয়। এরপর হোস্টেল থেকে স্থানীয় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ভেরনা থানার পুলিশ ক্যাম্পাসে পৌঁছয়। মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান হয়। 

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'ছাত্রটিকে বিছানায় পাশ ফিরে ঘুমানো অবস্থায় পাওয়া যায়। আগের রাতে সে ক্যাম্পাসে টেবিল টেনিস খেলেছিল এবং পরে নিজের রুমে ফিরে যায়। ঘরটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। শনিবার সকালে তাঁর দরজায় কোনও সাড়া না পাওয়ায় হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ রবিবার ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।' 

ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত ছাত্র অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। বি'ই কম্পিউটার সায়েন্স এবং এমএসসি ইকোনমিক্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এমনকী তাঁর সিজিপিএ (CGPA) ছিল প্রায় ৯।

বিআইটিএস পিলানি গোয়া ক্যাম্পাস-এর জনসংযোগ আধিকারিক অর্জুন হালারনকর সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'বিআইটিএস পিলানি গোয়া ক্যাম্পাস সম্প্রদায় এই ছাত্রকে হারিয়ে গভীরভাবে শোকাহত। ১৬ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে তাঁর রুম খোলার পর তাঁকে অচেতন অবস্থায় বিছানায় পাওয়া যায়। এরপর মেডিক্যাল টিম নিশ্চিত করে যে তিনি ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছেন। পুলিশকে ইতিমধ্যেই পুরো বিষয় জানান হয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা প্রয়োজনীয় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরাও সম্পূর্ণ এবং যথাযথ সহযোগিতা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রটির বাবা তাঁর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলের অবস্থান জানার চেষ্টা করেন। বন্ধুরা অনেক চেষ্টা করেও রুম খুলতে না পেরে শেষমেশ ভেন্টিলেটর দিয়ে দেখে যে ছাত্রটি বিছানায় পড়ে আছে।'

এই মৃত্যুর ঘটনা গোটা বিআইটিএস গোয়া ক্যাম্পাসে গত নয় মাসে চতুর্থ ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে এর আগের তিনটি ঘটনা ছিল আত্মহত্যা। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে ওই তিনটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

প্রথম ঘটনায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে উত্তর প্রদেশের এক ২১ বছর বয়সী দ্বিতীয় বর্ষের বি'ই কম্পিউটার সায়েন্স এবং এমএসসি কেমিস্ট্রির ছাত্র আত্মহত্যা করে। দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে। এই ঘটনায় ২০ বছর বয়সী তৃতীয় বর্ষের এক দ্বিতীয় ডিগ্রির ছাত্র আত্মহত্যা করেন। তৃতীয় ঘটনা ছিল মে মাসে। এক্ষেত্রে লখনউয়ের এক ২০ বছর বয়সী ছাত্র এমএসসি কেমিস্ট্রি এবং বি'ই ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইন্সট্রুমেন্টেশন কোর্সে পড়ছিলেন। এহেন পরপর মৃত্যুর ঘটনার পর, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে ছাত্রদের মানসিক চাপ হ্রাস এবং সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য।

আরও পড়ুনঃ রাজনীতি নয়, সুরেই মুগ্ধতা ছড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী! রাজভবনে 'পহেলা নশা' পরিবেশনে কনরাড সাংমার সঙ্গীতপ্রেমে

এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে পাঠক্রম সংস্কার, পেশাদার মনোবিদ নিয়োগ, চব্বিশ ঘণ্টা হেল্পলাইন চালু, শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ সেশন, সপ্তাহে একবার অন্তত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে নতুন কোর্স চালু করা।

ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে ইনস্টিটিউট জানিয়েছে যে, যেসব ছাত্র মানসিক চাপে আছে, তাদের পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় বা বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়া হবে।
এমতাবস্থায়, ছাত্র সমাজ এবং অভিভাবক মহলে আবারও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ক্রমাগত ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার পর। বর্তমানে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। পুলিশ বাকি দিকও খতিয়ে দেখছে।

আরও পড়ুনঃ মেঘের দেশে যৌনতার সীমা ছাড়ালেন তরুণী! মায়ের ঘুম ভাঙতেই যা হল...