আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের এক স্কুলে সম্প্রতি এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি বেগুসরাই জেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটে। খবর অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের দুই প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বিদায় জানানোর জন্য একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় উক্ত স্কুলে। অনুষ্ঠানটি একপ্রকার ব্যতিক্রমী ও আবেগঘন অনুষ্ঠান হিসেবে হয়৷ জানা গিয়েছে, এই বিদায় অনুষ্ঠান অনেকটা 'কন্যাদান' অনুষ্ঠানের মতো ছিল। বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক আমিতা কুমারী ও রাজহংস কুমার সম্প্রতি বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন। এর জেরে তাঁদের নতুন বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই বিদায় অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মী শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় বিদায় জানান।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষিকা আমিতা কুমারীকে একটি চুনরী পরিয়ে সাজানো হয়। শিক্ষিকার এমন সাজসজ্জা 'কন্যাবিদায়' অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যবাহী আচারকে মনে করিয়ে দেয়। বিদ্যালয়ের মহিলা শিক্ষকরা ‘খইচা ভরাই’ (ল্যাপে উপহার ভরা) এবং ‘চুমাওয়ান’ (আর্শীবাদ প্রদান) এর মতো রীতিও পালন করেন। এটি সাধারণত মেয়েকে বাপের বাড়ি থেকে বিদায় দেওয়ার সময় করা হয়।
আমিতা কুমারীর পাশে বসে থাকা রাজহংস কুমারকেও বরসাজে সাজানো হয়। এই পুরো আয়োজনটি ছাত্রছাত্রীদের আবেগে ভাসিয়ে তোলে। এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকাকে স্কুল ছাড়ার সময় ছাত্র-ছাত্রীরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে সম্মান জানান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীকৃষ্ণ দাস সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, 'আজকের পুরো অনুষ্ঠান অসাধারণ ছিল। একজন শিক্ষককে এমনভাবেই বিদায় জানানো উচিৎ। তাঁদের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, তাঁরা শিশুদের জন্য যা করেছেন এবং তাঁদের সঙ্গে যে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে সেই বন্ধনের প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি। ওনারা আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং সেই ত্যাগের প্রতিদান স্বরূপ আমরা তাঁদের সম্মান জানানোর চেষ্টা করেছি। আমি কামনা করি, তাঁরা যেখানেই যান, আরও ভাল কাজ করবেন এবং ভবিষ্যতেও আরও বেশি সম্মান অর্জন করবেন।'
এই অনুষ্ঠান ঘিরে বিদ্যালয়ের চিত্রশিল্প শিক্ষক উপেন্দ্র চৌধুরী মন্তব্য করে বলেছেন, 'এই অনুষ্ঠান অনেক চিন্তাপূর্ণ ও অর্থবহ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিদায় অনুষ্ঠানটি শুধু আমাদের বিদ্যালয়ের নয়, বরং পুরো বিহার রাজ্যের জন্য একটি বার্তা বহন করবে এবং আমাদের সমাজের গর্ব হয়ে থাকবে।'
দুই শিক্ষকের বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক তাঁদের দুজনকেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক, ডায়েরি, মালা, কলম ও ফুলের তোড়া উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এই অসাধারণ বিদায় অনুষ্ঠান শুধু বিদ্যালয়ের নয়, গোটা সমাজের কাছেই এক প্রেরণার উৎস হয়ে রইল।
