আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের বিহারের ভোট নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এবারেরর ভোটে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ। তাঁর নেতৃত্বেই এবারের নির্বাচনে ভাল ফলাফল করল লোক জনশক্তি পার্টি।
কঠিন দরকষাকষির পর জেডিইউ ও বিজেপি চিরাগ পাসোয়ানকে মাত্র ২৯টি আসন ছেড়েছিল। মনঃপুত না হলেও শেষমেষ এনডিএ-তেই তেকে য়ান লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) প্রধান। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ২৯টির মধ্যে ২২টি আসনে এগিয়ে রয়েছেন এলজেপি প্রার্থীরা। দলের সাফল্যের হার প্রায় ৭৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা ভোটে ধরাশায়ী হয়েছিল এলজেপি। নীতীশ কুমারের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধের জেরে ১৩০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল চিরাগের দল। কিন্তু, জিতেছিল মাত্র একটি আসনে। কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিল রামবিসালের এলজেপি। তখন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করেছিলেন যে, চিরাগের তাঁর বাবা রামবিলাস পাসোয়ানের মতো ক্যারিশমা এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নেই।
দলের উত্তরাধিকারী নিয়ে বিরোধের জেরে ২০২১ সালে কাকা পশুপতি কুমার পরশের সঙ্গে চিরাগের দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। এলজেপি ভাগ হয়ে যায়।
পাঁচ বছরে পরিস্থিতি বদলেছে। এরপর চিরাগের কঠিন লড়াই বিহারবাসীর নজরে পড়ে। ৪৩ বছর বয়সী রামবিলাস-পুত্র চিরাগ নিজেকে একজন যুব নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি নিজেকে 'যুব বিহারী' বলে অভিহিত করেন এবং দলিতদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাঁর দলের মূলনীতির উপর অটল থাকেন। এতেই কাজ হয়। এবারের ভোটে ভাল ফলাফল করে ঘুরে দাঁড়াল লোক জনশক্তি পার্টি। বিহারের ভোটে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন চিরাগ পাসোয়ান।
চিরাগ এবং তাঁর দলের বাকিদের কঠোর পরিশ্রম ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ফলপ্রসূ হয়েছিল। এলজেপি যে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সবকটিতেই জিতেছিলেন প্রার্থীরা। সাফল্যের হার ছিল ১০০ শতাংশ।
লোকসভায় সাফল্য এলেও এনডিএ-র প্রধান দল- বিজেপি এবং জেডিইউ, এবারের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০টিরবেশি আসন এলজেপি (আরভি)-কে দিতে অনিচ্ছুক ছিল। এরপর চিরাগ প্রশান্ত কিশোরের জন সূরাজ পার্টির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি কোনওভাবেই শাসক জোটকে সমর্থনে রাজি নন। এরপরই দরকাষাকষি করে ক্ষমতাসীন জোট থেকে ২৯টি আসন ছিনিয়ে নেন এই যুব নেতা।
এরপর কী?
নির্বাচনের আগে চিরাগ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য আগ্রহী। সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, "আমি দলীয় কর্মীদের অনুভূতিকে সম্মান করি। তাদের নেতাকে তারা সর্বোচ্চ পদে দেখতে আগ্রহী। এটাই তাদের আকাঙ্ক্ষা। যদি আপনার কর্মী বিশ্বাস না করে যে আপনি শীর্ষ পদে পৌঁছাতে পারবেন, তাহলে আপনি তাদের অনুপ্রাণিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি সবসময় চেয়েছিলাম আমার বাবা রাম বিলাস পাসোয়ান জি প্রধানমন্ত্রী হোন। আমি জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। তবে আমি প্রথমে একটি স্তর অতিক্রম করি এবং তারপরে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করি। বিহার নির্বাচনের পর আমার তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার হল ২০২৭ সালে উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাব নির্বাচন। তারপর ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, আমি আমার প্রধানমন্ত্রীকে চতুর্থবারের জন্য নির্বাচিত হতে দেখতে চাই। এবং তারপরে আমরা ২০৩০ সালের দিকে মনোনিবেশ করব।"
ফলাফলের কয়েকদিন আগে, চিরাগ প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি তাঁর অটল আনুগত্য পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। ভোটের ফলাফল ভিন্ন হলেও অন্য কোনও জোটে য়াওয়ার ক্ষেত্রে নিজের মতামত জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি প্রিয়াঙ্কা (গান্ধী)জির সঙ্গে কথা বলেছি, এবং আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই যে যতক্ষণ আমার প্রধানমন্ত্রী আছেন, আমি কোথাও যাচ্ছি না। আমার নিষ্ঠা এবং ভালোবাসা রয়ে গিয়েছে। আমি তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী মোদি) একটু বেশিই ভালোবাসি।"
