আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী পাঁচ বছর বিহারের মসনদে কে? নীতিশের প্রত্যাবর্তন নাকি রাহুল-তেজস্বীর জুটিতে এবার বিহারে খেলা ঘোরাবে মহাজোট? প্রথম এবং দ্বিতীয়, দুই প্রশ্ন ই উঁকি দিচ্ছে বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকেই। যদিও সব সংস্থার সমীক্ষা জানাচ্ছে, ফের এনডিএ-ই সরকার গড়বে বিহারে, তবে সমীক্ষায় উঠে এসেছে আরও একটি তথ্য। তথ্য, বিহারে, এবার প্রথম বারের ভোটাররা, অর্থাৎ যারা এই প্রথম নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন, তাঁদের একটা বড় অংশ আস্থা রাখছেন রাহুল-তেজস্বীর জুটির উপরে।
এমনিতেই এই ভোট একদিক থেকে রাজনৈতিক দলগুলির অ্যাসিড টেস্ট। এসআইআর-এর পর প্রথম ভোট হল বিহারে। এসআইআর কোন রাজনৈতিক দলের উপরে কতটা প্রভাব ফেলল, আদৌ ফেলল কি না, তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে, আগামিকালের ফলাফলেই। বিহার বিধানসভার আসন সংখ্যা ২৪৫। ম্যাজিক ফিগার ১২২। গত ভোটে এনডিএ আর মহাজোটের মাঝে ফারাক খুব বেশি ছিল না। টক্কর হয়েছিল একেবারে কাঁটায় কাঁটায়। এবার কী হবে ফলাফল? এসআইআর কতটা হিসেব বদলাতে পারবে?
অন্যদিকে এসআইআর ছাড়াও, বিহার ভোটের ক্ষেত্রে ভাবাচ্ছে সে রাজ্যের ইতিহাসও। ৬ নভেম্বর এবং ১১ নভেম্বর, দু'দফার ভোট গ্রহণ হয়েছে বিহারে। বিহারে মোট ভোটার উপস্থিতি ৬৬.৯১%, যা তাদের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি রেকর্ড। কারণ, ২০২০ সালে বিহার নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন মাত্র ৫৭.২৯% মানুষ। বিহারের ইতিহাসের তথ্য, যখনই আগের ভোটের থেকে পাঁচ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েছে, তখনই বদলে গিয়েছে সরকার। ১৯৬৭'র ভোট বড় উদাহরণ তার।
তবে, ভোট এবং ভোটের ফলাফলের বিষয়ে উল্লেখ্য আরও একটি বিষয়। ভোট এবং ভোটের ফলাফল কেমন হবে, কোনদিকে যাবে, তা নির্ভর করে সে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উপর। বিহার আজও জাতপাতভিত্তিক রাজনীতি ও সামাজিক বিভাজনে জর্জরিত। ফলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত অনেক সময় অর্থনৈতিক বাস্তবতার চেয়ে সামাজিক আনুগত্য বা স্বল্পমেয়াদি প্রলোভনের ওপর নির্ভর করে। নগদ অর্থসাহায্য ও অন্যান্য নির্বাচনী প্রলোভন সহজেই বিরোধী মনোভাবকে স্তিমিত করে দিতে পারে। উপরন্তু, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ভোটের ফল অনুমান করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে বিহারের প্রতি ব্যক্তি মোট রাজ্য আয় (NSDP) ছিল মাত্র ₹৬০,৩৩৭, যা ভারতের গড় (₹১,৮৪,৯০৩)-এর প্রায় ৩০ শতাংশ। এটি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। দারিদ্র্যের হারও ভয়াবহ।
উল্লিখিত বিষয়গুলি ছাড়াও, রয়েছে বিহারের আরও একাধিক ফ্যাক্টর। আর সেসব কিছু মাথায় রেখেই, বিহারে মোট ৭.৪৫ কোটি ভোটার ২,৬১৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন। ভোট গণনার সময়, প্রতিটি গণনা হলে ১৪+১ টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৪টি টেবিলে ইভিএমের গণনা হবে, আর একটি টেবিল সহকারী নির্বাচনী অফিসার পরিচালনা করবেন। প্রতিটি টেবিলে একজন কাউন্টিং সুপারভাইজার, একজন কাউন্টিং সহকারী এবং একজন মাইক্রো ওভসারভার থাকবেন। ভোট গণনার ফলাফলের অফিসিয়াল তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে। বুধবার নির্বাচন কমিশনের জারি করা এক বিবৃতি অনুসারে, নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটগুলি স্ট্রং রুমের ভেতরে ডাবল-লক সিস্টেমের মাধ্যমে সিল করে দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং প্রার্থীদের নিয়োগ করা এজেন্টদের উপস্থিতিতে, পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি করা হবে।"
গণনা কেন্দ্রগুলিতে দ্বি-স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "গণনা কেন্দ্রের মধ্যে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র আধাসামরিক বাহিনী (সিএপিএফ) সুরক্ষার জন্য মোতায়েন থাকবে। রাজ্য পুলিশ বাইরের মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও, ২৪/৭ সিসিটিভি নজরদারি এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিৎ করা হয়েছে।"
প্রতিটি স্ট্রং রুম ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ঊর্ধ্বতন জেলা কর্মকর্তারা থাকবেন। সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের সমস্ত জেলা নির্বাচনী আধিকারিক এবং রিটার্নিং অফিসারদের ঘন ঘন স্ট্রং রুম পরিদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
