আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার ভোটগণনার মাঝামাঝি সময়, যখন বিহারে NDA-র বড় জয়ের ইঙ্গিত মিলছিল, ঠিক তখনই অসমের মন্ত্রী অশোক সিংহলের একটি পোস্ট নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করল। স্বাস্থ্য ও সেচ দপ্তরের এই মন্ত্রী এক্স-এ একটি টাটকা ফুলকপির ক্ষেতে ছবি দিয়ে লিখলেন— “Bihar approves Gobi farming”। প্রথম দেখায় পোস্টটি নিরীহ মনে হলেও, পরক্ষণেই স্পষ্ট হয় যে এটি ১৯৮৯ সালের ভগলপুর হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করছে—যেখানে বহু মুসলিমকে হত্যা করে তাদের দেহ ফুলকপির খেতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।
ভগলপুর হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি জাগিয়ে তোলা এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে। মানবাধিকার সংস্থা Diaspora in Action for Human Rights and Democracy পোস্ট করে বলেছে, “গোবি চাষ” শব্দবন্ধটি এখন দক্ষিণপন্থী ডিজিটাল মহলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাংকেতিক উস্কানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে লগাইন গ্রামে একসঙ্গে ১১৬ মুসলিমকে হত্যা করে যেসব গণকবরে দেহ চাপা দেওয়া হয়েছিল, তার ওপরে ফুলকপি লাগানোই ছিল প্রমাণ গোপন করার পদ্ধতি।
তীব্র সমালোচনার মাঝেও সিংহল তাঁর পোস্টটি মুছে দেননি বা পরিবর্তন করেননি। বরং পরে তিনি এক্স-এ আরেকটি পোস্ট করে বিহারে NDA–র জয়ের কৃতিত্ব অমিত শাহকে দেন এবং ‘সামাজিক কৌশল’, ‘সাংস্কৃতিক প্রচার’ এবং নারী–যুবশক্তির ক্ষমতায়নকে সাফল্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তাঁর প্রথম পোস্টটি তাঁর দাবি করা “সাংস্কৃতিক প্রচারের” সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকেই।
কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ এই পোস্টকে “অশ্লীল ও লজ্জাজনক” বলে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “১৯৮৯ সালের ভগলপুর গণহত্যার ভয়াবহতা যেখানে ফুলকপির ক্ষেতে লাশ গোপন করার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছিল, সেই স্মৃতি নিয়ে ব্যঙ্গ করা একটি সভ্য সমাজে অমার্জনীয়।” তাঁর মতে, এই মনোভাব অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিস্ব শর্মার নেতৃত্বেই পুষ্ট হচ্ছে। গগৈ বলেন, “অসম বৈরিতার নয়, শংকরদেব, লাচিত বরফুকন ও আজান পিরের মানবতার ভূমি।”
বিহারের কিশনগঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ ড. মহম্মদ জবাদও BJP–কে মুসলিমবিদ্বেষে প্ররোচিত করার অভিযোগ এনেছেন। “BJP/RSS–এর কাছে মুসলিমবিদ্বেষই তাদের মূল পুঁজি,” মন্তব্য তাঁর। সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে পোস্টটিকে “হিংসায় উস্কানি” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্য সাংবিধানিক শপথের সঙ্গে অসঙ্গত এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, তিনি একজন গর্বিত হিন্দু হিসেবে মনে করেন, কোনও ধর্ম বা জাতীয়তাবাদ এমন হত্যালীলা সমর্থন করে না, বরং এর নিন্দাই করে। তাঁর মন্তব্য: “এটি কোনওভাবেই আমাদের জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে সিংহলকে সমালোচনা করে বলেছেন, “গোবি চাষ শব্দবন্ধটি মুসলিম হত্যাকে মহিমান্বিত করার সংকেত। এটি কোনও প্রান্তিক ব্যক্তি নয়—মোদির দলের এক রাজ্যের মন্ত্রী।”
বিহার ভোটের আনন্দ প্রকাশের নামে এমন বিতর্কিত ও বিভাজনমূলক পোস্ট রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই ধরনের ‘কোডেড’ ঘৃণাত্মক বার্তা ভারতের নির্বাচন–পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিপজ্জনক দিক তুলে ধরে।
Bihar approves Gobi farming ✅ pic.twitter.com/SubrTQ0Mu5
— Ashok Singhal (@TheAshokSinghal)Tweet by @TheAshokSinghal
