আজকাল ওয়েবডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের স্টেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (SIA) বৃহস্পতিবার জম্মুর কাশ্মীর টাইমস–এর অফিসে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। সংবাদপত্রটির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ প্রচারের অভিযোগ ওঠার পর এই অভিযান পরিচালিত হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকেই শুরু হওয়া তল্লাশি সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তল্লাশির সময় অফিস থেকে একাধিক একে–৪৭ রাইফেলের কার্তুজ, পিস্তলের গুলি ও তিনটি গ্রেনেড–লিভার উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর উৎস ও সম্ভাব্য উদ্দেশ্য নিয়ে তদন্ত চলছে।

অ্যান্টি-ন্যাশনাল প্রচারের অভিযোগে FIR দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাশ্মীর টাইমস–এর বিরুদ্ধে একটি প্রথম তথ্য প্রতিবেদন (FIR) নথিভুক্ত করা হয়েছে। FIR–এ সংবাদপত্রটির বিরুদ্ধে- জনমনে বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ ছড়ানো, বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডকে মহিমান্বিত করা, ভারতের সার্বভৌমত্ব ও জম্মু–কাশ্মীরের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করা—এরকম গুরুতর অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।


সম্পাদক অনুরাধা ভাসিনের নামও FIR–এ রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে FIR–এ কাশ্মীর টাইমস–এর এক্সিকিউটিভ এডিটর অনুরাধা ভাসিন–এর নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা বলেছেন, পত্রিকার কার্যকলাপ ও সম্ভাব্য যোগাযোগগুলি “রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে কিনা” তা খতিয়ে দেখাই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।

যদিও এখনো পর্যন্ত পত্রিকার তরফে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তল্লাশির ঘটনায় কাশ্মীর টাইমস–এর পক্ষ থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনও  আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। তবে সংবাদমহলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং পত্রিকা কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

৬০ বছরের অধিক প্রাচীন সংবাদপত্রের অফিস থেকে অস্ত্র উদ্ধার স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। কাশ্মীর টাইমস জম্মু–কাশ্মীরের অন্যতম পুরোনো ও সুপরিচিত সংবাদপত্র। ১৯৫৪ সালে বেদ ভাসিন সাপ্তাহিক হিসেবে পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৬৪ সালে এটি দৈনিক সংবাদপত্রে রূপান্তরিত হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে অঞ্চলটির রাজনৈতিক–সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনামূলক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য পরিচিত।

SIA–র এই অভিযান অঞ্চলটির সংবাদমাধ্যম–রাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পত্রিকার ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও আইনি লড়াই কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখন সময়ই জানাবে।
সংবাদপত্রের মালিকানা ও লক্ষ্যবস্তু হওয়ার অভিযোগ

কাশ্মীর টাইমস–এর মালিক অনুরাধা ভাসিন, যিনি প্রয়াত প্রবীণ সাংবাদিক বেদ ভাসিনের কন্যা। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সংবাদপত্রটির “রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সম্ভাব্য সংশ্লেষ” নিয়েই তদন্ত চলছে এবং প্রকাশনার প্রোমোটরদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

তল্লাশি অভিযানকে কেন্দ্র করে সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন ও প্রবোদ্ধ জামওয়াল একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেন—“জম্মুতে আমাদের অফিসে অভিযানের খবর, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং কাশ্মীর টাইমস–এর বিরুদ্ধে সমন্বিত দমন-পীড়ন আমাদের চুপ করানোর আরেকটি প্রচেষ্টা।”

তাঁরা আরও বলেন, “সরকারকে সমালোচনা করা মানেই রাষ্ট্রবিরোধী হওয়া নয়। বরং এর বিপরীতটাই সত্য। একটি শক্তিশালী, প্রশ্নকারী সংবাদমাধ্যম সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ক্ষমতাকে জবাবদিহির আওতায় আনা, দুর্নীতি তদন্ত করা এবং প্রান্তিকের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা—এগুলোই জাতিকে শক্তিশালী করে, দুর্বল নয়।”

তল্লাশি অভিযান সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের ডেপুটি সিএম সুরিন্দর সিং চৌধারি বলেন— “যদি কোনো ভুল কাজ করে থাকে, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু শুধুমাত্র চাপ তৈরির উদ্দেশ্যে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা ভুল হবে।”

সরকারি সূত্র দাবি করেছে, মামলাটি এমন কিছু কার্যকলাপ ও যোগাযোগ নিয়ে, যা “দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সম্ভাব্য হুমকি” হিসেবে পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, অনুরাধা ভাসিনের সম্ভাব্য যোগাযোগ ও কার্যকলাপের পর্যালোচনাই তদন্তের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় আর্থিক সমস্যার কারণে কাশ্মীর টাইমস–এর মুদ্রিত সংস্করণ বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে কেবল ই-পেপার প্রকাশিত হলেও সাত মাস আগে সেটিও থেমে যায়, যখন ক্রাইম ব্রাঞ্চ একটি জিজ্ঞাসাবাদের পর অফিসের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সতর্ক করে। বর্তমানে কাশ্মীর টাইমস কেবল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২০ সালের অক্টোবরে শ্রীনগরের প্রেস এনক্লেভে অবস্থিত কাশ্মীর টাইমস–এর কার্যালয় জম্মু–কাশ্মীর প্রশাসনের নির্দেশে সিল করা হয়েছিল, যা তখনই ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে।

১৯৫৪ সালে বেদ ভাসিনের উদ্যোগে সাপ্তাহিক হিসেবে যাত্রা শুরু করা কাশ্মীর টাইমস ১৯৬৪ সালে দৈনিক পত্রিকায় পরিণত হয়। বহু দশক ধরে এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য পরিচিত।

সাম্প্রতিক তল্লাশি ও FIR–কে কেন্দ্র করে অঞ্চলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের প্রতি সমালোচনা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তদন্তের ফলাফল কী আসে, তার ওপরই কাশ্মীর টাইমস–এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও আইনি লড়াই অনেকটাই নির্ভর করবে।