সম্প্রতি অভিনেতা গোবিন্দার স্ত্রী সুনীতা আহুজা বিবাহিত জীবনে বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা নিয়ে মুখ খুলেছেন। একটি সাক্ষাৎকারে তাঁকে মানসিক এবং শারীরিক প্রতারণার মধ্যে কোনটি বেশি যন্ত্রণাদায়ক, সে বিষয়ে কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এই আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছিল টুইঙ্কল খান্না এবং কাজলের একটি টক শো-কে কেন্দ্র করে। 

 


সেখানে অতিথিদের একই প্রশ্ন করা হলে তাঁদের কিছু মন্তব্য (যেমন: 'রাত গেই বাত গেই') অনেকের চোখে বিশ্বাসঘাতকতাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা বলে মনে হয়েছিল। সুনীতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে কোন ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেবে—মানসিক নাকি শারীরিক? এর উত্তরে এক মুহূর্তও না ভেবে সুনীতা মানসিক প্রতারণাই বেশি যন্ত্রণাদায়ক বলে বেছে নেন। 

 


সাক্ষাৎকারে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, "মানসিক প্রতারণা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। যখন আপনি কাউকে মন থেকে ভালবাসেন, সম্পূর্ণ ভরসা করেন, আর তারপরই তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন, সেটা একদমই ঠিক নয়, এর প্রভাব গভীর হয়।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমি খুবই আবেগপ্রবণ মানুষ। আমি গোবিন্দাকে আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালবাসি। আমার সন্তান হোক বা স্বামী, যখন কেউ মানসিকভাবে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, আমি খুব আঘাত পাই। এই মানসিক আঘাতের ক্ষত দূর করা কঠিন। তাই, কাউকে মানসিকভাবে আঘাত করবেন না, কারণ এটি খুবই খারাপ।"

 


অন্যদিকে, শারীরিক প্রতারণা প্রসঙ্গে সুনীতার অবস্থান, "সেটাও করা উচিত নয়! এর কোনওটিই করার কি প্রয়োজন? কোনও প্রকারের বিশ্বাসঘাতকতাই সঠিক হতে পারে না।" তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, "আমার মনে হয়, এসবই ভুল। আমাদের বাবা-মা এই ধরনের মূল্যবোধ শেখাননি। বর্তমান সম্পর্কগুলোর এই অস্থির প্রবণতা দেখে মনে হয়, আমরা এখন কলিযুগে বাস করছি, যেখানে পারিবারিক বন্ধন হালকা হয়ে যাচ্ছে।"

 


এই প্রসঙ্গে তিনি স্বামী গোবিন্দার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ ৩৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের কথাও স্মরণ করেন। তারকা-পত্নী হিসেবে তাঁকে যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি খোলাখুলি আলোচনা করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জীবন সাধারণ নয়। 

 


সুনীতা বলেন, "দেখুন, তিনি একজন নায়ক। নায়করা তাঁদের স্ত্রী'দের চেয়েও বেশি সময় নায়িকাদের সঙ্গে কাটান। গোবিন্দা হয়তো ৪০ দিনের জন্য শুটিংয়ে যেতেন, আর আমি বাড়িতে একা থাকতাম, সমস্ত দায়িত্ব সামলাতাম।"

 


তবে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি একটি কঠিন সত্য উপলব্ধি করেছেন। সুনীতা বলেন, "একজন নায়কের স্ত্রী হতে গেলে হৃদয় পাথরের মতো শক্ত হওয়া প্রয়োজন, যাতে গুজব বা দীর্ঘ অনুপস্থিতি তাঁকে ভেঙে দিতে না পারে।" তিনি স্বীকার করেন, "আমাদের তারুণ্যে এতটাই গভীর ভালবাসা ছিল যে আমি অন্য কিছু বিবেচনা করিনি, কিন্তু ৩৮ বছরের বিবাহিত জীবন আমাকে এই কঠিন সত্যি শিখিয়েছে।" 

 


অতীতে দাম্পত্যের ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সুনীতা আরও বলেন, যৌবনে ভুল করা স্বাভাবিক। কিন্তু একবার যখন জীবনে সন্তান আসে, তখন সকল বাবা-মায়ের উচিত নিজেদের রাশ টেনে ধরা এবং পরিবার ও সন্তানদের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করা। তিনি প্রশ্ন করেন, "তখনও কেন ভুল করবেন? আপনার সুন্দর পরিবার, সুন্দর স্ত্রী এবং সন্তান রয়েছে। তাহলে কেন এই ঝুঁকি নেবেন?" সুনীতার এই নতুন সাক্ষাৎকার সমাজমাধ্যমে ফের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।