আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমেরিকায় দুই চীনা নাগরিককে বিষাক্ত ছত্রাক পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই দুই নাগরিকের কাছে যে প্যাথোজেন উদ্ধার হয়েছে সেগুলি শস্যের যম। এই গ্রেপ্তারির ফলে বড়সড় বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ। এরপরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে চাষের জমিই কি নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে? কৃষিসন্ত্রাসই কি ভবিষ্যৎ? যে সন্ত্রাসে ভুক্তভোগী খোদ ভারতও।
কৃষি বা কৃষিভিত্তিক ক্ষেত্রগুলি তুলনামূলকভাবে সহজ লক্ষ্যবস্তু। এখানে আক্রমণ শনাক্ত করা কঠিন। খাদ্যব্যবস্থা সহজেই অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির অর্থনীতিকে ধ্বংস করার একটি সাশ্রয়ী উপায়।
আমেরিকায় কী হয়েছে
এক চীনা বিজ্ঞানী এবং তাঁর বান্ধবীকে কৃষিজমি সংক্রামিত করার চেষ্টায় একটি বিষাক্ত ছত্রাক পাচারের অভিযোগে আমেরিকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ‘গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ’ বলে অভিহিত করেছে।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চীনের গবেষক জুনিয়ং লিউ ছত্রাকটি পাচার করার চেষ্টা করেছিলেন যাতে তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে সেটির পরীক্ষা করতে পারেন। সেখানে তাঁর বান্ধবী ইউনকিং জিয়ান কাজ করতেন। বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে জিন এই জীবাণু নিয়ে গবেষণার জন্য চীনা সরকারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছিলেন।
ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম নামে ছত্রাকটিকে আমেরিকায় ‘সম্ভাব্য কৃষি-সন্ত্রাসবাদের অস্ত্র’ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। গম, বার্লি, ভুট্টা এবং ধানের মতো ফসল ধ্বংস করার পাশাপাশি, এটি মানুষের মধ্যে প্রবেশ করলে বমি এবং লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
কৃষি সন্ত্রাসবাদ কী
 
  
 
 সহজ ভাষায়, জৈব অস্ত্র ব্যবহার করে শস্য ধ্বংস করাকেই কৃষি সন্ত্রাসবাদ বলে। লক্ষ্যটি সহজ- অর্থনীতিকে ধ্বংস করা এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করা। ধরা পড়ার সম্ভাবনা ন্যূনতম, এবং এর খরচও কম। এই জৈবিক আক্রমণের বিরুদ্ধে ফৌজদারি শাস্তি আরোপের কোনও আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো নেই।
যদিও এই ধরণের আক্রমণ নতুন নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের আলুক্ষেতে গুবরে পোকা ছেড়ে দিয়েছিল জার্মানি। বিমান থেকে ওই পোকা কৃষিজমিতে ছাড়া হয়েছিল। জাপান আমেরিকা এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গমক্ষেতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। প্রায় একই পরিকল্পনা ছিল আমেরিকারও। কিন্তু তারা সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা হামলা চালায়।
ভারতও কৃষি-সন্ত্রাসের শিকার
ভারতের জিডিপি-তে ১৭ শতাংশ অবদান রয়েছে কৃষিক্ষেত্রের। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ চাষবাস অথবা কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত।
পাঞ্জাব, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে পাকিস্তান এবং চীনের সীমান্ত রয়েছে। ওই রাজ্যগুলিতে কৃষি সন্ত্রাসের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সালে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর গবেষণাপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে হামলা চালানো বিষাক্ত ছত্রাকের সন্ধান মিলেছিল পশ্চিমবঙ্গের দু’টি জেলায়। কেন্দ্র গমের চাষের সর্বনাশ করা ছত্রাক ম্যাগনাপোর্থে অরাইজা প্যাথোটাইপ ট্রিটিকাম (এমওটি) এর বিস্তার রোধ করতে ওই দু’টি জেলায় তিন বছরের জন্য গম চাষ নিষিদ্ধ করে।
তাছাড়া, বাংলাদেশ সংলগ্ন অন্যান্য জেলায় আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চাষাবাদ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল, এই পোকামাকড় ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয় কৃষি-বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করানো হয়েছিল। কিন্তু এর কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
