গুজরাতের মেঘানিনগরে বিমান দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৪২ জনকে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রিবাহী বিমান। দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, বিমানটিতে মোট ২৪২ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৩২ জন যাত্রী এবং ১০ জন ক্রু সদস্য। সকলেই মৃত! বিমানের দুই পাইলটের নাম ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর। এটি বোয়িং সংস্থার বি৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান ছিল। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে না হলেও কাছাকাছি একটি অঞ্চলের নাম স্যাটেলাইট। কর্মসূত্রে এক বহুজাতিক সংস্থার কর্মী  বহু বছর ধরেই সেখানে রয়েছেন ঋতুরাজ সরকার। দুর্ঘটনার খবর কানে আসতেই দেরি করেননি তিনি। ছুটে গিয়েছেন সেখানে। এইমুহূর্তে দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশেই রয়েছেন তিনি। সেখান থেকে আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে কথা বললেন তিনি।  

 


“বিজে মেডিক্যাল কলেজটি হরিপুরা ওশরওয়া অঞ্চলে অবস্থিত। সেই অঞ্চল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে না হলেও কাছাকাছি একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল স্যাটেলাইট -এ থাকি আমি। তখন কাজ করছিলাম। আমাদের সোসাইটি বেশ চুপচাপ। হঠাৎ বেশ চাঞ্চল্য লক্ষ্য করলাম। ছোটাছুটি, চিৎকার। তারপরেই জানতে পারলাম এই দুর্ঘটনার কথা। আমার বাড়ি থেকে হাঁটাপথে মিনিট কুড়ি লাগে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে। কোনও কিছু না ভেবেই কাজ ছেড়ে গাড়ি বের করে বিজে মেডিক্যাল কলেজের দিকে ছুটলাম। শুধু মনে হচ্ছিল, যদি কারও-কোনও সাহায্যে লাগতে পারি।”  

 

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ঋতুরাজ  বলেছেন, “গিয়ে দেখি বহু মানুষ ছোটাছুটি করছেন। সকলের মুখেই আতঙ্কের ছাপ। কেউ কেউ কাঁদছেন। উদ্ধারকার্যে ততক্ষণে নেমে পড়েছে সেনাবাহিনী। আসলে, বিজে মেডিক্যাল কলেজের পাশেই রয়েছে একটি বড় আর্মি ক্যাম্প। তার নাম সম্ভবত, হরিপুরা আর্মি ক্যাম্প। পাশে একটি আর্মি সাপ্লাই ডিপো-ও রয়েছে। সেটির অনেকাংশ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। আর একটা কথা, চারপাশে বিজে মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরা আহত হয়েছেন। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে! কালো ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে চারপাশ। দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে সাধারণ মানুষদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না।”

 


“আমি কোনওরকমে দেখতে পেলাম এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানের একটি ডানা পুরো ভেঙে ঢুকে গিয়েছে মেডিক্যাল হোস্টেলে। অন্যপাশ থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ওই কলেজ। তবে এখনও ওই ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকে রয়েছেন। কান্না আর চিৎকার ভেসে আসছে। আর সাইরেনের একটানা বিরাট শব্দ। কানে তালা ধরে যায়। উদ্ধারকাজে একসঙ্গে হাত লাগিয়েছে অহমদাবাদের পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। যত সময় গড়াচ্ছে পুলিশবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর আকার বেড়ে চলেছে।”  

 

 

“একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স হুটার বাজিয়ে আসছে এবং মৃত, আহতদের নিয়ে দুদ্দাড় করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর ঢুকছে পরপর বুলডজার। ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার কাজে সাহায্য করতে। অনেক মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেসব দেখা যে কী যন্ত্রণার...  চারপাশে স্থানীয় অধিবাসীরা কেমন যেন থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কী হচ্ছে, এবার কী হবে কিছুই বুঝতে পারছেন না তাঁরা। আমার অবস্থাও খানিক সেরকম।” 

 

“যদি এটা কোনও দুঃস্বপ্ন হত, সবথেকে খুশি হতাম। কিন্তু জানি, এটা তা নয়। কবে এই ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারব জানি না। জানি না, স্থানীয় অধিবাসীরাও কবে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এই লেখা লিখতে লিখতে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, চোখের সামনে বীভৎস সেইসব দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছে...চারপাশ সব তছনছ হয়ে গিয়েছে...আর, আর কিছু  লিখতে পারছি না!”