আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরোত্তর জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষিতে ভারতজুড়ে তরুণদের প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগজনক এক চিত্র উঠে এসেছে ক্লাইমেট এডুকেটর নেটওয়ার্ক (CEN)-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। ২০২৪ সালের শুরুতে ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী ১,৬০০ প্রথমবারের ভোটারদের নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয় সাতটি শহরে।
সমীক্ষা ও ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী জানান, জলবায়ু শিক্ষা শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়, অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তাঁরা এতে নিজেদের সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত মনে করছেন। স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হাতে-কলমে শিক্ষার অভাবের কথাও উঠে এসেছে বারবার।
তবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের জলবায়ু নীতিগুলিতে শিক্ষার ভূমিকা প্রায় অনুপস্থিত। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির রাজ্য জলবায়ু কর্মপরিকল্পনায় শিক্ষার উল্লেখ হয়েইনি প্রায়। পশ্চিমবঙ্গের পরিকল্পনায় শিশু ও যুবদের নামই নেই। জাতীয় কর্মপরিকল্পনাও (NAPCC) সচেতনতার কথা বললেও স্কুলশিক্ষায় জলবায়ু বিষয়ক নির্দিষ্ট দিশা নেই। পাঠ্যবইগুলোতে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শব্দটি প্রায় নেই, বা কেবলমাত্র বিজ্ঞান বা পরিবেশ অধ্যায়ের শেষে কিছু তথ্যাত্মক প্রশ্নে সীমাবদ্ধ।
এই প্রসঙ্গে, শিক্ষা ও পরিবেশ বিষয়ক বিভাগগুলির মধ্যে যোগাযোগের অভাব এবং শিক্ষকদের অপ্রস্তুতি সমস্যাটিকে আরও তীব্র করছে। বহু শিক্ষক মনে করেন, জলবায়ু শিক্ষা কেবল বিশেষজ্ঞদের কাজ। তবে এর বিকল্প পথ দেখাচ্ছে কিছু উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান। তামিলনাড়ুর মরুদম ফার্ম স্কুল বা দিল্লির ক্লাইমেট জাস্টিস লাইব্রেরির মতো প্রকল্পগুলো স্থানিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার নতুন দিশা দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুকে শুধু বৈজ্ঞানিক বিষয় হিসেবে না দেখে তা সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে শেখানোর সময় এসেছে। পাঠ্যক্রমে স্থানীয় বাস্তবতা ও সমস্যা-ভিত্তিক পাঠ আনতেই হবে। সিএন-এর দাবি, শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, নীতিগত স্তরে শিক্ষা ও অন্যান্য দপ্তরের পারস্পরিক সমন্বয় এবং শিক্ষাকে জীবিকা ও ভবিষ্যৎ পেশার সঙ্গে যুক্ত করাটাই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। তাদের কথায়, “তথ্য জানার থেকে বেশি জরুরি হলো বাস্তবতা মোকাবেলার দক্ষতা অর্জন। শিক্ষাই সেই হাতিয়ার।”
