আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এ এনডিএ-র ঐতিহাসিক জয়ের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির বিজেপি সদর দপ্তরে কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এই জয়কে গণতন্ত্রের প্রতি বিহারবাসীর “অভূতপূর্ব আস্থা” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বিহারের মানুষ ‘‘এক নতুন ইতিহাস’’ রচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্যে বিশেষভাবে উঠে আসে মহিলা ভোটার ও তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা। মোদি বলেন, “কিছু দল বহু বছর ধরে বিহারে ধর্ম-জাতিভিত্তিক "MY" বা মুসলিম-যাদব রাজনীতি করেছে। কিন্তু আজ বিহার নতুন, ইতিবাচক "MY" সমীকরণ তৈরি করেছে—মহিলা ও যুব। ধর্ম বা জাতির ঊর্ধ্বে উঠে এই যুবসমাজ ও মহিলারা উন্নয়ন ও স্বপ্নের পক্ষে রায় দিয়েছেন।”
মোদির দাবি, এই ফলাফল প্রমাণ করেছে যে বিহার পুরনো বিভাজনমূলক রাজনীতি ছেড়ে উন্নয়নের পথকে বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, “জঙ্গলরাজ এবং কাট্টা সরকারের দিন শেষ। আমি যখন এই শব্দগুলি ব্যবহার করতাম, আরজেডি কোনওই আপত্তি তুলত না, কিন্তু কষ্ট পেত কংগ্রেস। আজ আবার বলছি, বিহারে কাট্টা সরকার কখনও ফিরবে না। মানুষ উন্নত বিহারের পক্ষে ভোট দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান যে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে এবং রেকর্ড সংখ্যক ভোটদানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর কথায়, “যে বিহারে একসময় মাওবাদী আতঙ্কে দুপুর তিনটার পর ভোট হত না, যেই বিহারে বুথ লুট আর ব্যালট বাক্স ছিনতাই ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার—আজ সেই বিহারই শান্তিপূর্ণভাবে রেকর্ড ভোট turnout দিয়েছে। এটা নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আস্থা আরও বাড়িয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, ভোটের হার এবং ভোটদাতার অংশগ্রহণই প্রমাণ করে যে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও শক্তিশালী হয়েছে।
মোদি বলেন, ২০১০ সালের পর এই প্রথম বিহার এনডিএ-কে এত শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে। তিনি বিহারবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “এটি একটি বিশাল বিজয়, এক অটুট আস্থা। বিহারের মানুষ সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন।” পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের নাগ্রোটা ও ওড়িশার নুয়াপাড়া উপনির্বাচনে বিজেপির জয়ের জন্যও তিনি ভোটারদের ধন্যবাদ জানান।
বিজেপি সদর দপ্তরে বিজয়োৎসবের মধ্যে পার্টির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এই ফলাফলকে “সুনামি” বলে মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্য, “বিহারবাসী বিভাজনের রাজনীতিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়নের পক্ষে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। মহাগঠবন্ধন বিহারকে বাইরের শক্তির ভরসায় চালাতে চেয়েছিল, কিন্তু বিহারের মানুষ তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।” নাড্ডা বলেন, এই নির্বাচন ছিল ‘‘উন্নয়ন বনাম জঙ্গলরাজ’’ এবং বিহারবাসী উন্নয়নকেই বেছে নিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী, ১৪৭টি আসনের ফল প্রকাশ হয়েছে—এর মধ্যে এনডিএ ১২৫টি আসনে জয়ী হয়েছে, মহাগঠবন্ধন মাত্র ১৭টি আসন পেয়েছে এবং এআইএমআইএম ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। বাকিগুলির গণনা রাত পর্যন্ত চলছিল।
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর ভাষণের শেষাংশে বলেন, “বিহার সেই ভূমি, যাকে গণতন্ত্রের জননী বলা হয়। আজ সেই ভূমি গণতন্ত্রের উপর আঘাত আনতে চাওয়া শক্তিগুলিকে পরাস্ত করেছে। বিহার দেখিয়ে দিল—মিথ্যা হারেই, জনবিশ্বাসই জয়ী হয়।”
