আজকাল ওয়েবডেস্ক: বঙ্কিমচন্দ্র, বাঙালির ভাবাবেগ। তাঁর 'বন্দে মাতরম' নিয়ে সোমে আলোচনা হয়েছে লোকসভায়। বিরোধীরা বলছেন, আগামী বছরে বাংলায় ভোট, আর সেই কারণেই বাঙালির আবেগ কাজে লাগাতে বঙ্কিম ইস্যুতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। কারণ যাই হোক না কেন, 'বন্দে মাতরম'-এর ১৫০ বছরে, লোকসভায় আলোচনায় বিজেপি নেতারা তার রচয়িতার নাম উচ্চারণ করতেই যেন ল্যাজে গোবরে। আর সোমবার দিনভর তা নিয়েই চর্চা দেশের রাজনীতিতে।
শুরু, খোদ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে। বঙ্কিমচন্দ্রের কথা বলতে গিয়ে, তিনি সোজা 'বঙ্কিমদা' বলে বসেন। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের 'অন্তত বাবু' বলুন শুনে, শুধরে নেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও বলতে উঠে যা বললেন, তাতেও সেও নাম-বিভ্রাট।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সং শেখাওয়াত এদিন বলেন, 'বন্দে মাতরম যখন মহান কবি বঙ্কিম দাস চ্যাটার্জি লিখেছিলেন...'। তাঁর এই বক্তব্যের পরেই তুমুল হইচই শুরু হয়ে যায় লোকসভার অন্দরে। হইচইয়ের মাঝেই দায়সারা ভঙ্গিতে তিনি বলেন, 'বঙ্কিম চ্যাটার্জি, চট্টোপাধ্যায়' বলে, তুমুল হইচইয়ের মাঝেই বাকিদের থামার ইশারা করে, নিজের বক্তব্য বলতে থাকেন।
'বন্দে মাতরম' নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্যের মাঝেই, মোদির এক মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। এদিনের বক্তব্যে, একটা বড় সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলা, বাঙালি নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানেই, বাঙালি বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে বলার সময়, মোদির কথায় শোনা যায় 'বঙ্কিমদা'। তিনি বলেন, 'বঙ্কিমদা এমন একটা সময় এই গান লিখেছিলেন, যখন ভারতকে নিচু করে দেখানোটাই ফ্যাশন ছিল।' যদিও তাঁর বক্তব্যের মাঝেই ভুল শুধরে দেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়। তিনি মোদির ভাষণ শুধরে দিয়ে বলেন, 'অন্তত বাবু বলুন।'
সৌগত রায়ের বক্তব্যের পরেই, প্রধানমন্ত্রী দ্রুত উত্তর দেন, 'আমি বঙ্কিম বাবু বলব। ধন্যবাদ, আমি আপনার অনুভূতিকে সম্মান করি।' এরপর তিনি হালকা স্বরে বলেন, 'আমি আপনাকে দাদা বলতে পারি, তাই না? নাকি এতেও আপনার আপত্তি আছে?'
কেবল 'বঙ্কিমদা' নয়, বাঙালিদের কথা বলতে গিয়ে, মোদি আরও এমন কিছু বলেছেন, যেগুলি নিয়ে এবশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পুলিনবিহারী দাসের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলে বসেন, পুলিনবিকাশ। আবার বঙ্কিম'এ 'দা' বলে বাধা পেয়ে, মাস্টারদা'র থেকে 'দা' বাদ দিয়েও বসেন।
প্রধানমন্ত্রী এরপর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে 'বন্দে মাতরম'-এর ভূমিকা সম্পর্কে কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, গানটি কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার মন্ত্র ছিল না, বরং 'ভারতমাতাকে উপনিবেশবাদের চিহ্ন থেকে মুক্ত করার জন্য একটি যুদ্ধের স্লোগান' ছিল।
এদিনের বক্তব্যে হাত শিবিরকেও চরম কটাক্ষ করেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, 'বন্দে মাতরম'কে অপমান করেছে কংগ্রেস। এদিনের বক্তব্যে মোদি দাবি করেন, জিন্নার পথ ধরেই নাকি, নেহেরু 'বন্দে মাতরম'কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বাছতে চাননি। তাঁর মনে হয়েছিল, এই গান অস্বস্তি তৈরি করতে পারে মুসলমান সম্প্রদায়ের। 'বন্দে মাতরম'-এর ১০০ বছরে জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে ইন্দিরা গান্ধীকেও বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী।
