আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রসঙ্গ, 'বন্দে মাতরম'। এবার শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন উত্তপ্ত লোকসভা। আজ সোমবার 'বন্দে মাতরম' রচনার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বক্তব্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যে বক্তব্যেই প্রধানমন্ত্রীর এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তুঙ্গে। যা ঘিরে এবার লোকসভাতেই সরব হলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
এদিন লোকসভায় প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য, 'জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানেই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান এবং সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলা। নেহরু ১২ বছর জেলবন্দি ছিলেন, এই ১২ বছর নরেন্দ্র মোদিও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আপনারা আমার সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু তিনি যদি ইসরো তৈরি না করতেন, তাহলে মঙ্গলযান তৈরি হত না। তিনি যদি এইমস না তৈরি করতেন, তাহলে বর্তমান সরকার অতিমারির কীভাবে যুদ্ধ করতেন?'
প্রিয়াঙ্কা আরও বলেন, 'আপনার যদি নেহরুকে নিয়েই আলোচনা করতে চান, তাহলে এক কাজ করুন, আলোচনার জন্য সময় বের করুন, তাঁকে যত অপমান করার করুন, তর্ক করুন, তারপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বন্ধ করুন। 'বন্দে মাতরম' নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে, অথচ আসল সমস্যা নিয়ে কথা হচ্ছে না। দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। একগুচ্ছ সমস্যা চারিদিকে। আর এদিকে সরকার সেই সমস্যা নিয়ে কথাই বলছে না।'
'বন্দে মাতরম' প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আরও বক্তব্য, 'আমরা এই প্রসঙ্গে তর্কবিতর্ক কেন করছি? এটা আমাদের জাতীয় গান। শুধু বাংলাকে টার্গেট করেই এই প্রসঙ্গে কথা বলছে কেন্দ্র, সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে। কারণ সামনেই বাংলায় নির্বাচন। এই সরকার বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা না করে, অতীত নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত।'
প্রসঙ্গত, এদিন গানটি নিয়ে বক্তব্য পেশের সময় প্রধানমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে 'বঙ্কিমদা' সম্বোধন করেন। যদিও তখনই তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় পাল্টা বলেন, 'অন্তত বাবু বলুন।' 'বন্দে মাতরম' গানের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করেন তিনি।
১৮৭৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'বন্দে মাতরম' লিখেছিলেন। চলতি বছরে 'বন্দে মাতরম'-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়, বছরভর বন্দে মাতরমের সার্ধ শতবর্ষকে স্মরণ করে নানা অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে। দিন কয়েক আগে 'বন্দে মাতরম'-এর স্মারক স্ট্যাম্প এবং কয়েন প্রকাশ করেছেন।
গত মাসেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ফের সরব হন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস জমানায় 'বন্দে মাতরম'-এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্তবক বাদ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে দেশভাগের বীজ বপন করেছিল কংগ্রেসের এই কাজ। কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, 'দুর্ভাগ্য হল, ১৯৩৭ সালে 'বন্দে মাতরম'-এর গুরুত্বপূর্ণ স্তবক, যা গানটির প্রাণ, সেগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 'বন্দে মাতরম'-এর ওই বিভাজন দেশভাগের বীজ বপন করেছিল। আজকের প্রজন্মের জানা উচিত, জাতি গঠনের এই ‘মহামন্ত্র’-এর সঙ্গে কেন এই অবিচার করা হয়েছিল। এই বিভাজনমূলক মানসিকতা এখনও দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।'
এদিন লোকসভাতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে লেখা নেহরুর চিঠির অংশ তুলে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, আসল 'বন্দে মাতরম' গানটি মুসলিমদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যে বলেই জানিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। চিঠির খানিকটা অংশ তুলে মিথ্যে তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছেন বলেও সরব হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। ১৯৩৭ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে লেখা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর চিঠি নিয়েও ভুল সংশোধন করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্না ‘বন্দেমাতরম’কে অপমান করেছিলেন। নেহরু তাঁর ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মোদি বলেন, 'জিন্নার বিরোধিতার পর ২০ অক্টোবর জওহরলাল নেহেরু সুভাষচন্দ্র বসুকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি 'বন্দে মাতরম'-এর পটভূমি পড়েছেন এবং মনে করেন এটি মুসলমানদের উত্তেজিত করতে পারে।'
এর জবাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, 'বন্দে মাতরমের দু'টি প্যারা বাদ দেওয়া নিয়ে সাম্প্রদায়িক রং লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর থেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সকলেই 'বন্দে মাতরম'-এর দুটো প্যারাগ্রাফই গ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নেহরুর চিঠি পড়লেন, জবাব নেতাজি কী বলেছিলেন তা কেন পড়ে শোনালেন না? নেতাজি তো গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। আবার গুরুদেবও জানিয়েছিলেন, 'বন্দে মাতরম'-এর প্রথম দুটো প্যারার সঙ্গে আনন্দমঠে থাকা অংশের সংযোগ তেমন ভাবে নেই, তাই সেটি আলাদা করে গ্রহণ করা যেতেই পারে।'
