আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহিলাদের যোনিতে সংক্রমণ বা ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন এতদিন শুধুমাত্র নারীর সমস্যা হিসেবেই দেখা হতো। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য—এই সংক্রমণ আসলে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে ছড়ায়। ফলে, শুধুমাত্র মহিলা চিকিৎসা করালেই এই রোগ সারবে না। পুরুষের চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ আবার ফিরে আসে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজন এই সমস্যায় ভোগেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর প্রতিবেদন অনুসারে, সংক্রমণ পুরোপুরি নিরাময় করতে হলে নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। নাহলে পুনঃসংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।
মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৮১টি দম্পতির ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালান। দেখা যায়, নারীদের অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এবং পুরুষদের বিশেষ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্রিম দেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহেই প্রায় অর্ধেক দম্পতি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। বাকিরাও ধারাবাহিক চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করেন। গবেষণায় আরও জানা যায়, ভ্যাজাইনোসিস-এর জীবাণু শুধু নারীর যোনিতে নয়, পুরুষের লিঙ্গের ত্বক ও মূত্রনালীতেও থাকে। তাই চিকিৎসা না করলে পুরুষের শরীর থেকেই নারীর শরীরে পুনরায় সংক্রমণ ছড়ায়।
আরও পড়ুন: অণ্ডকোষ না ঝুলন্ত ‘ডিম’! নারীদের যোনির বিরল রোগ পুরুষ রোগীর গোপনাঙ্গে! অবস্থা দেখে অস্থির চিকিৎসকরা!
ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নীলম সুরি জানিয়েছেন, “নারীদের স্রাবজনিত সমস্যা যেমন সাধারণ, তেমনই পুরুষদের ক্ষেত্রেও গোপনাঙ্গে সংক্রমণ দেখা যায়। তাই একসঙ্গে চিকিৎসা না হলে রোগ সারবে না।” বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন সম্পর্কিত এই ধরনের সংক্রমণকে হালকাভাবে নেওয়া বিপজ্জনক। কারণ এটি শুধু নারী নয়, পুরুষকেও সমানভাবে প্রভাবিত করে। উভয়ের মধ্যে চিকিৎসা না হলে বারবার সংক্রমণ দেখা দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এ কারণে ডাক্তাররা দম্পতিদের যৌথ চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন।
চিকিৎসকদের পরামর্শ:
গোপনাঙ্গে চুলকানি, অস্বাভাবিক স্রাব বা জ্বালাপোড়া দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যৌন সম্পর্কিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়কেই একসঙ্গে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসা চলাকালীন যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলাই ভাল।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সুরক্ষিত যৌন আচরণ চর্চা করা অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্বব্যাপী গবেষণাটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—নারী ও পুরুষ উভয়ের সচেতনতা ও সমান্তরাল চিকিৎসাই পারে এই সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে। চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলেছেন, দেরি করলে জটিলতা বাড়বে এবং ভবিষ্যতে সন্তান ধারণ ক্ষমতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
