আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্ট্রোক শব্দটি শুনলেই অনেকের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। সেটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ এই রোগ সত্যিই প্রাণঘাতী। আসলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা রক্তক্ষরণের কারণে এই ঘটনা ঘটে। কোনও ধমনিতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে বা ধমনি ফেটে গেলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেন পায় না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, আর তখনই দেখা দেয় পক্ষাঘাত, বাকশক্তি লোপ, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা স্মৃতিভ্রংশের মতো উপসর্গ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একেই স্ট্রোক বলা হয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ায়। তবে সঠিক সময়ে সঠিক খাবার বেছে নিলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত কিছু খাবার খেলে সেগুলি শরীরের ধমনি ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। রইল এমনই পাঁচটি খাবারের তালিকা।
১. গোটা শস্য: ওটস, ব্রাউন রাইস বা ঢেঁকি ছাঁটা গমের রুটি শরীরকে পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ বা ফাইবারের যোগান দেয়। ফাইবার রক্তে কোলেস্টেরল কমায় এবং ধমনিতে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। গবেষণা বলছে, নিয়মিত গোটাদানার খাবার খেলে মানুষের স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। সকালের জলখাবার হিসাবে এক বাটি ওটমিল শুধু পেটই ভরায় না, মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহও সচল রাখে।
২. সামুদ্রিক মাছ: রুই-কাতলা নয়। এবার নজর দিন স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিনের দিকে। এই সব সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্তকে অতিরিক্ত ঘন হতে দেয় না এবং শরীরের প্রদাহ কমায়। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ফ্যাটি ফিশ খেলে মস্তিষ্কের ধমনি নমনীয় থাকে, রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. বাদাম ও বীজ: আখরোট, কাঠবাদাম, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড প্রভৃতি খাবারে শরীরকে দেয় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলি রক্তনালীর আস্তরণ মজবুত করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়, যা স্ট্রোক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
৪. সবুজ পাতা সমৃদ্ধ সবজি: পালং শাক, কলমি শাক, কিংবা ব্রকলির মতো সবুজ খাবারে ফোলেট, ভিটামিন কে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। এই উপাদানগুলি রক্তচাপ কমাতে, ধমনির প্রদাহ হ্রাস করতে এবং রক্তপ্রবাহ ভাল করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত এক বাটি সবুজ শাক খাওয়া স্ট্রোক প্রতিরোধের অন্যতম সহজ উপায়।
৫. বেরি জাতীয় ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি এখন বাংলাতেও পাওয়া যায়। এই ফলগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামের এক বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি রক্তনালীর কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত দু’বার বেরি ফল খেলে মহিলাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘স্তনদুগ্ধ আইসক্রিম’ খেতে হুড়োহুড়ি বড়দেরও! কত দাম? কোথায় পাওয়া যাবে এই স্বাদ?
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
সব মিলিয়ে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রতিদিনের খাবারের প্লেটে এই পাঁচটি উপাদান নিয়মিত রাখুন। সঙ্গে দরকার লবণ ও চিনি খাওয়ার অভ্যাস কমানো, পর্যাপ্ত জলপান, ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং নিয়মিত ব্যায়াম। মনে রাখবেন, স্ট্রোক এক মুহূর্তে জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, কিন্তু সঠিক জীবনযাপন ও সঠিক খাবার বেছে নিয়ে সেই ঝুঁকি অনেকটাই দূরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব।
