সুস্বাস্থ্যের জন্য যেসব খনিজ উপাদান জরুরি তার মধ্যে জিঙ্ক অন্যতম। এই খনিজটি দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে হরমোন নিয়ন্ত্রণ, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা, এমনকী মন-মেজাজ ঠিক রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই জিঙ্কের ঘাটতি শরীরের একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে মহিলাদের শরীরে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। শরীরে জিঙ্কের মাত্রা কমে গেলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে অনেক জটিল সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
• অনিয়মিত ঋতুস্রাব ও সন্তান ধারণে সমস্যা: জিঙ্ক হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। এর অভাবে ঋতুস্রাবচক্রের ও গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• অতিরিক্ত চুল পড়া ও নখ ভেঙে যাওয়া: চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়া এবং নখ দুর্বল হয়ে সহজেই ভেঙে যাওয়া-এসবই জিঙ্ক ঘাটতির লক্ষণ।
• ত্বকের সমস্যা: শরীরের জিঙ্কের ঘাটতি হলে শুকনো ত্বক, ফুসকুড়ি, একজিমা, কিংবা ঘন ঘন ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে।
• ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে শরীর ঘন ঘন ঠান্ডালাগা, জ্বর বা অন্যান্য সংক্রণে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• ক্ষত শুকোতে দেরি হওয়াঃ জিঙ্ক শরীরের কোষ মেরামতের কাজ করে। তাই এর ঘাটতিতে ক্ষত শুকোতে অনেক সময় লাগে।
• ওজন ও খিদে কমে যাওয়া: খাওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়া কিংবা খাওয়ার প্রতি অনিচ্ছা, স্বাদ-গন্ধ অনুভব না হওয়া, ওজন কমে যাওয়া সবই শরীরে জিঙ্কের ঘাটতির সংকেত হতে পারে।
• মনোযোগের ঘাটতি ও দুর্বল স্মৃতিশক্তি: আপনি যদি হঠাৎ ভুলে যাওয়া বা মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার মতো সমস্যায় ভোগেন, তাহলে এর পেছনে জিঙ্কের অভাব থাকতে পারে।
• অবসাদ ও চিড়চিড়ে মেজাজ: জিঙ্ক মন-মেজাজ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এর ঘাটতিতে হতাশা বা রাগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• জিহ্বায় সাদা আস্তরণ বা মুখে ঘাঃ মুখে ঘা, জিহ্বায় সাদা প্রলেপ বা গন্ধে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা জিঙ্কের ঘাটতির লক্ষণ।
• হজমের সমস্যাঃ শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিঙ্ক না থাকলে অন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
• চোখে সমস্যাঃ রাতে পরিষ্কার দেখতে না পাওয়া বা চোখে আলোতে অস্বস্তি হওয়াও জিঙ্কের ঘাটতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
• হাড় ও জয়েন্টে ব্যথাঃ জিঙ্ক হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে জিঙ্কের ঘাটতি মেটাবেন
জিঙ্কের ঘাটতি কাটানোর জন্য নিয়মিত জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত কাজুবাদাম এবং আখরোটের মতো বাদামে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। এছাড়াও, গম, চাল এবং ওটসের মতো গোটা শস্যও জিঙ্কের ভাল উৎস। খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন ছোলা, মুসুর ডাল এবং রাজমার মতো ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ। মাংস বিশেষত রেড মিটে জিঙ্ক বেশি থাকে। সামুদ্রিক খাবার বিশেষ করে শেলফিশ, জিঙ্কের একটি দুর্দান্ত উৎস। ঝিনুকের মধ্যে জিঙ্কের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও, কাঁকড়া, চিংড়ি এবং মাছও খেতে পারেন। জিঙ্কের ঘাটতির সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
