আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্ট্রোক মানেই আতঙ্ক, আর তার পরিণতি হতে পারে চরম। মুহূর্তের মধ্যে মানুষকে পক্ষাঘাতে পঙ্গু করে দিতে পারে এই প্রাণঘাতী সমস্যা। আগে যেখানে স্ট্রোককে বয়স্কদের রোগ হিসেবে ভাবা হতো, আজ তা ভেঙে দিচ্ছে সেই ধারণা। চিকিৎসকদের মতে, তরুণ প্রজন্মও এখন এই বিপদের মুখোমুখি। শুধু স্ট্রোক নয়, বাড়ছে ডিমেনশিয়ার মতো স্নায়বিক সমস্যার আশঙ্কাও। দিল্লির এইমস হাসপাতালের নিউরোসার্জন ডাঃ অরুণ এল নায়েক জানিয়েছেন, ভারতের মস্তিষ্ক-সংক্রান্ত রোগের পরিসংখ্যান দিন দিন উদ্বেগজনক হচ্ছে। তাঁর মতে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১৮ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের অনেকেই চল্লিশোর্ধ্ব না-ও। একই সঙ্গে, ডিমেনশিয়ার প্রভাবও ধীরে ধীরে ছড়াচ্ছে অপেক্ষাকৃত কমবয়সিদের মধ্যেও। এর জন্য দায়ী জীবনযাত্রার অনিয়ম, মানসিক চাপ এবং শরীরে বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি।
আরও পড়ুন: এক বউ, দুই বর! সিমলায় ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের বিয়ে—এ যেন এক জ্যান্ত 'দ্রৌপদী প্রথা'
তবে আশার কথা, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে কিছু অভ্যাস এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমেই অনেকাংশে স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ডাঃ নায়েক জানিয়েছেন এমন পাঁচটি কার্যকর উপায়, যা মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখবে দীর্ঘদিন।
১. ভিটামিন বি১২-এর গুরুত্ব:
স্মৃতিশক্তি, স্নায়ুর কাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এই ভিটামিন অপরিহার্য। এর অভাবে ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া এমনকি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। আমিষভোজীরা মাছ, মাংস, ডিমে এই চাহিদা পূরণ করতে পারেন। নিরামিষাশীদের জন্য আছে দুধজাত খাবার, গোটা শস্য এবং পরিপূরক সাপ্লিমেন্ট।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:
স্নায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ওমেগা-৩ একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ কমিয়ে কর্মক্ষমতা বাড়ায়। চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিয়া বীজ, তিসির বীজ, আখরোট ও তিসির তেলেও এই উপাদান থাকে।
৩. ভিটামিন ডি:
এই ভিটামিনের অভাবেই ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। সকালবেলা সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ থাকলে শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করে। পাশাপাশি ডিমের কুসুম, মাশরুম ও ফোর্টিফাইড দুধ থেকেও মেলে প্রয়োজনীয় ডোজ।
৪. ম্যাগনেসিয়াম:
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, স্ট্রেস কমানো ও স্নায়ুর সুরক্ষায় ম্যাগনেসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পালং শাক, বাদাম, কুমড়োর বীজ, গোটা শস্যের মাধ্যমে এই খনিজ উপাদান পাওয়া যায়।
৫. আয়রন:
মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে আয়রনের গুরুত্ব অপরিসীম। ঘাটতি হলে মনোযোগের অভাব, ক্লান্তি এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি দেখা যায়। মহিলাদের মধ্যে এই ঘাটতির প্রবণতা বেশি। মাংস ছাড়াও ডাল, শাকসবজি এবং সিরিয়াল থেকেও আয়রন পাওয়া যায়। মস্তিষ্ককে অগ্রাধিকার দিন। শারীরিক অসুখের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য, স্মৃতিশক্তি এবং স্নায়বিক সুস্থতাও নজরে রাখুন। সঠিক খাওয়াদাওয়া, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা এবং সচেতন জীবনযাপনই হতে পারে দীর্ঘজীবী, সুস্থ মস্তিষ্কের চাবিকাঠি।
