আজকাল ওয়েবডেস্ক: জিম-এর সদস্যপদ বা ঝাঁ-চকচকে বাহারি সরঞ্জাম নয়, সুস্থ থাকার সহজতম এবং অন্যতম সেরা চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে আমাদের অতি পরিচিত এক অভ্যাসে। মনে পড়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সেই দামোদর পেরনোর গল্পের কথা? সত্য না কল্পনা, তাই নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, আট থেকে আশি, যে কোনও বয়সের মানুষের জন্য সাঁতার এক কথায় আদর্শ এক ব্যয়াম। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন, আপাদমস্তক সুস্থ থাকতে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রিয় সাঁতারের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু কেন? কোন জাদুতে সাঁতার অন্য সমস্ত ব্যয়ামকে টেক্কা দেয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাঁতার একাধারে একটি ‘কার্ডিওভাসকুলার’ এবং ‘মাসকুলার’ ব্যয়াম। অর্থাৎ, এটি একই সঙ্গে হৃদযন্ত্র এবং পেশি, দুইয়েরই কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যখন কোনও ব্যক্তি সাঁতার কাটেন, তখন তাঁর শরীরের প্রায় প্রতিটি প্রধান পেশি একসঙ্গে কাজ করে। হাত, পা, কাঁধ, পিঠ, এবং পেটের পেশি- সবই সমানভাবে সক্রিয় থাকে। জলের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাতাসের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় পেশিগুলিকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে অল্প সময়েই পেশি সুগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অন্য যে কোনও একটি ব্যায়ামে এতটা সার্বিক শারীরিক উপকার পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

সাঁতারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি ‘লো-ইমপ্যাক্ট’ ব্যায়াম। অর্থাৎ এটি অস্থিসন্ধির উপর চাপ সৃষ্টি করে না। লাফানো বা জিমে ভারোত্তোলনের মতো ব্যায়ামে অস্থিসন্ধি বা ‘জয়েন্ট’-এর উপর প্রবল চাপ পড়ে, যা থেকে ভবিষ্যতে চোট-আঘাতের আশঙ্কা থাকে। বিশেষত, যাঁদের আর্থ্রাইটিস বা হাঁটু-কোমরের ব্যথা রয়েছে, তাঁদের জন্য এই ধরনের ব্যায়াম বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সাঁতারে জলের মধ্যেই শরীর ভেসে থাকে, ফলে অস্থিসন্ধি থাকে প্রায় চাপমুক্ত। অথচ, সারা শরীরের ব্যায়াম হয় পুরোদমে। এই কারণেই বয়স্ক ব্যক্তি বা চোট-আঘাত থেকে সেরে ওঠা মানুষের রিহ্যাব-এর জন্য সাঁতারকে প্রায়শই সেরা মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের জন্যও সাঁতার আশীর্বাদস্বরূপ। নিয়মিত সাঁতার কাটলে হৃদযন্ত্রের পেশি শক্তিশালী হয়, রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দবদ্ধ পদ্ধতির কারণে ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা রোগীরাও নিয়মিত সাঁতার কেটে উপকার পেতে পারেন।
আরও পড়ুন: পর্ন দেখলে লিঙ্গ শিথিলতার আশঙ্কা বাড়ে? বিস্ফোরক তথ্যে চিন্তা বাড়ালেন গবেষকরা

শুধু শরীর নয়, মনের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতেও সাঁতারের জুড়ি মেলা ভার। জলের মধ্যে থাকার অনুভূতি এবং ছন্দবদ্ধ সাঁতার স্নায়ুকে শান্ত করে। শারীরিক পরিশ্রমের ফলে মস্তিষ্কে ‘এন্ডরফিন’ নামক হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা ‘ফিল-গুড’ হরমোন নামেও পরিচিত। এই হরমোন মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও অবসাদ কমাতে সাহায্য করে। ফলে অনিদ্রার সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরাও নিয়মিত সাঁতার কাটলে উপকার পান।
আরও পড়ুন: পর্ন দেখলে লিঙ্গ শিথিলতার আশঙ্কা বাড়ে? বিস্ফোরক তথ্যে চিন্তা বাড়ালেন গবেষকরা

অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতেও সাঁতার অত্যন্ত কার্যকর। এক ঘণ্টা সাধারণ গতিতে সাঁতার কাটলে প্রায় ৫০০-৭০০ ক্যালোরি পর্যন্ত ঝরানো সম্ভব, যা দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানোর চেয়েও বেশি।

সুতরাং, সব দিক বিচার করে বলাই যায়, সাঁতার শুধুমাত্র একটি ব্যায়াম নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ ‘ওয়ার্কআউট’ যা শরীর ও মনকে একসঙ্গে সতেজ এবং নীরোগ রাখে। ব্যস্ত জীবনে আলাদা করে শরীরচর্চার সময় বার করতে না পারলেও, সপ্তাহে কয়েক দিন সাঁতারের জন্য বরাদ্দ করতে পারলে সুস্থ জীবনযাপনের পথে অনেকটাই এগিয়ে থাকা সম্ভব।