আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটা সময় ছিল যখন উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে চল্লিশ বা পঞ্চাশোর্ধ্বদের রোগ বলে ধরা হত। কিন্তু সেই ধারণা এখন অতীত। বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস আর লাগামছাড়া মানসিক চাপের কারণে এখন তিরিশের কোঠা পেরোতে না পেরোতেই বহু তরুণ-তরুণী এই রোগের শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়ে নীরবে বাড়ছে এই ‘নিঃশব্দ ঘাতক’-এর প্রকোপ।
কেন তিরিশেই বাড়ছে বিপদ?
১। অতিরিক্ত মানসিক চাপ: কেরিয়ার গড়ার চাপ, আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন সরাসরি রক্তচাপকে প্রভাবিত করে।
২। বেহিসেবি খাদ্যাভ্যাস: বাইরের কেনা খাবার, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, সস, চিপস প্রভৃতি খাবারে প্রচুর লবণ থাকে। সেই লবণের সোডিয়াম রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।
৩। শরীরচর্চার অভাব: ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাব শরীরের বিপাক হার কমিয়ে দেয়, যা ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তচাপও বাড়িয়ে তোলে।
৪। অপর্যাপ্ত ঘুম: নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে বা ঘুমের গুণমান খারাপ হলে শরীর ‘স্ট্রেস হরমোন’ নিঃসরণ করে, যা রক্তচাপকে ঊর্ধ্বমুখী করে।
৫। ধূমপান ও মদ্যপান: এই দু’টি অভ্যাস রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দিয়ে তাকে শক্ত করে তোলে, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বয়স ৩০ পেরোলেই কোন কোন বিষয়ে সতর্ক হবেন?
১. খাদ্যাভ্যাসে রাশ টানুন: পাতে কাঁচা নুন খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। চিপস, চানাচুর, আচার, সস, পিৎজা, বার্গারের মতো খাবারে লাগাম টানুন। কলা, কমলালেবু, সবুজ শাকসবজি, ডাবের জল ইত্যাদি বেশি করে খান। এগুলিতে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন
২. ঘাম ঝরানো জরুরি: প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট শরীরচর্চা করতেই হবে। জিমে না যেতে পারলে দ্রুত পায়ে হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটার মতো কাজও করতে পারেন। লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
৩. মানসিক চাপ? নৈব নৈব চ: নিয়মিত যোগাভ্যাস, ধ্যান বা প্রাণায়াম এক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। কাজের বাইরে নিজের পছন্দের কোনও কাজ করুন যা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
৪. ঘুম হোক পর্যাপ্ত: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। ঘুমের আগে মোবাইল বা ল্যাপটপের ব্যবহার কমান। দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম চাই-ই চাই।
৫. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মিত রক্তচাপ মাপা: হাইপারটেনশন ‘নিঃশব্দ ঘাতক’, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর তেমন কোনও উপসর্গ থাকে না। তাই নিয়ম করে রক্তচাপ মাপা অত্যন্ত জরুরি। বাড়িতে একটি ডিজিটাল রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রাখতে পারেন।
