আজকাল ওয়েবডেস্ক: পেটে ব্যথা বাঙালির এক নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। ভাজাভুজি বেশি খাওয়া হোক বা হজমের গোলমাল, ব্যথা হলেই চট করে অ্যান্টাসিড বা গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নেওয়া আমাদের অভ্যাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যথা সাময়িক এবং অল্পেই সেরে যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, সব পেট ব্যথাই সাধারণ নয়। বিশেষত, আধুনিক জীবনযাত্রার হাত ধরে যে রোগটি নিঃশব্দে থাবা বসাচ্ছে, সেই ফ্যাটি লিভার ডিজিজের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে পেটে ব্যথা। কিন্তু সমস্যা হল, সাধারণ পেট ব্যথার সঙ্গে এর ফারাক বুঝতে না পেরে অনেকেই বিষয়টিকে অবহেলা করেন। আর তাতেই বাড়ে বিপদের ঝুঁকি।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ পেট ব্যথা নানা কারণে হতে পারে। গ্যাস, অম্বল, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ঋতুকালীন ব্যথা- কারণের তালিকা দীর্ঘ। এই ব্যথা সাধারণত পেটের যে কোনও অংশে হতে পারে। কখনও নাভির চারপাশে, কখনও তলপেটে, আবার কখনও পেটের বাঁ দিকে। এর চরিত্রও বিভিন্ন রকম হয়। কখনও তীব্র, তীক্ষ্ণ, ছুঁচ ফোটানোর মতো ব্যথা, আবার কখনও মোচড় দেওয়া বা কামড়ে ধরার মতো অনুভূতি। সাধারণত, সঠিক খাওয়া-দাওয়া বা ওষুধপত্রের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যথা দ্রুত কমে যায়।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
ফ্যাটি লিভারের ব্যথা চিনবেন কী করে?
ফ্যাটি লিভারের কারণে যে ব্যথা হয়, তার চরিত্র এবং অবস্থান সাধারণ পেট ব্যথার থেকে অনেকটাই আলাদা। এই ব্যথা চেনার কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায় রয়েছে।
১। ব্যথার নির্দিষ্ট অবস্থান: ফ্যাটি লিভারের ব্যথা চেনার সবচেয়ে বড় উপায় হল এর অবস্থান। এই ব্যথা সাধারণত পেটের উপরের অংশে, ডান দিকে পাঁজরের ঠিক নিচে অনুভূত হয়। কারণ, আমাদের শরীরে লিভার বা যকৃতের অবস্থান এখানেই। লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে তা আকারে বড় হয়ে গেলে বা তাতে প্রদাহ হলে এই নির্দিষ্ট স্থানে একটা চাপা, অস্বস্তিকর ব্যথা তৈরি হয়। সাধারণ গ্যাসের ব্যথা পেটের বিভিন্ন অংশে ঘুরতে পারে, কিন্তু লিভারের ব্যথা মূলত এক জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।
২। ব্যথার চরিত্র: সাধারণ পেট ব্যথার মতো এটি তীক্ষ্ণ বা মোচড় দেওয়া নয়। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি একটি চাপা, চিনচিনে বা ভার ভার লাগার মতো অনুভূতি। অনেক রোগীর মনে হতে পারে পেটের ওই অংশটা যেন ভর্তি হয়ে আছে বা সামান্য ফুলে আছে। এই ব্যথা একটানা অনেকক্ষণ ধরে থাকতে পারে।
তবে লিভারের সমস্যার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক উপসর্গই আসল সূচক। শুধু ব্যথা দিয়ে রোগ চেনা কঠিন। তাই নজর রাখতে হবে অন্য আনুষঙ্গিক উপসর্গগুলির দিকেও। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে ব্যথার পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যা সাধারণ পেট ব্যথায় থাকে না।
১। অতিরিক্ত ক্লান্তি: কোনও কারণ ছাড়াই শরীর প্রচণ্ড দুর্বল লাগা এবং কাজকর্মে অনীহা।
২। খিদে কমে যাওয়া: খাওয়ার ইচ্ছা চলে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে ওজন কমে যাওয়া।
৩। বমি বমি ভাব: সারাক্ষণ একটা গা গোলানো অনুভূতি থাকা।
৪। জন্ডিসের লক্ষণ: রোগের বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চোখ ও ত্বকে হলদে ভাব ফুটে ওঠা।
৫। পা ফোলা: অনেক ক্ষেত্রে পা বা গোড়ালিতে জল জমার মতো ফোলা ভাব দেখা যায়।
সাধারণ গ্যাস-অম্বলের ব্যথায় ক্লান্তি, ওজন হ্রাস বা পা ফোলার মতো লক্ষণ থাকে না। এখানেই মূল পার্থক্য।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
কখন সতর্ক হবেন?
সুতরাং, পেটে ব্যথার চরিত্র এবং অবস্থানের দিকে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, যদি ব্যথাটি পেটের উপরের ডান দিকে সীমাবদ্ধ থাকে এবং তার সঙ্গে ক্লান্তি বা খিদে কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকে, তবে তাকে সাধারণ গ্যাসের ব্যথা ভেবে উড়িয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মনে রাখবেন, ফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও লক্ষণই থাকে না। ব্যথা অনুভূত হওয়া মানে রোগটি হয়তো দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই নিজেরা ডাক্তারি না করে, এই ধরনের কোনও ব্যথা বা উপসর্গ দেখা দিলেই অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের পরামর্শ নিন। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ই পারে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
