আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে নানা ধরনের বোতলবন্দি পানীয়। অনেকেই মনে করেন, কেবল মদ্যপানই লিভার বা যকৃতের ক্ষতি করে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা শুধু সেই ধারণাকে ভুলই প্রমাণ করছে না, আঙুল তুলছে আমাদের রান্নাঘরে বা ফ্রিজে থাকা নিত্যদিনের কিছু আপাত নিরীহ পানীয়ের দিকেও।
2
8
গবেষকদের মতে, হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ (এইচএফসিএস) দেওয়া পানীয় লিভারের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। তবে তালিকা অবশ্য এখানেই শেষ নয়। বরং এমন অনেক কিছুই আমরা রোজ পান করছি, যা অজান্তেই আমাদের লিভারকে ঠেলে দিচ্ছে মারাত্মক রোগের দিকে।
3
8
কেন খলনায়ক হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ? চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভুট্টার শ্বেতসার থেকে তৈরি এই মিষ্টি সিরাপটি প্রক্রিয়াজাত খাবার ও নরম পানীয়তে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। সাধারণ চিনির চেয়ে এর বিপাকক্রিয়া লিভারে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হয়। গ্লুকোজ শরীরের বিভিন্ন কোষ ব্যবহার করতে পারলেও, ফ্রুক্টোজের বিপাকের দায়িত্ব প্রায় পুরোটাই লিভারের উপর বর্তায়। অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ সরাসরি লিভারে চর্বি বা ফ্যাট হিসাবে জমতে থাকে। ফলে লিভারে প্রদাহ, কোষের ক্ষতি এবং অবশেষে সিরোসিসের মতো ভয়ঙ্কর রোগও হতে পারে।
4
8
অতিরিক্ত মদ্যপান: এটি লিভারের সবচেয়ে পরিচিত শত্রু। অ্যালকোহল লিভারে পৌঁছনোর পর এমন কিছু রাসায়নিকে পরিণত হয় যা লিভারের কোষকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। নিয়মিত মদ্যপানের ফলে প্রথমে ফ্যাটি লিভার, তারপর অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস এবং শেষে লিভার সিরোসিসের মতো প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে লিভারের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
5
8
চিনিযুক্ত নরম পানীয়: কর্ন সিরাপ না থাকলেও, অতিরিক্ত চিনি দেওয়া যে কোনও নরম পানীয় বা সোডা লিভারের জন্য সমান বিপজ্জনক। এই পানীয়গুলিতে থাকা পরিশোধিত চিনি খুব দ্রুত রক্তে মেশে এবং লিভারে গিয়ে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। গবেষণা বলছে, যাঁরা নিয়মিত এই ধরনের মিষ্টি পানীয় পান করেন, তাঁদের মধ্যে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এমনকি ‘ডায়েট’ সোডায় থাকা কৃত্রিম মিষ্টিও লিভারের স্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
6
8
এনার্জি ড্রিংক: ক্লান্তি দূর করতে বা শরীর চনমনে রাখতে অনেকেই এনার্জি ড্রিংকের উপর ভরসা রাখেন। কিন্তু এই পানীয়গুলিতে থাকা অতিরিক্ত ক্যাফিন এবং অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ, বিশেষত নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩)-এর উচ্চ মাত্রা লিভারের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এনার্জি ড্রিংক পানের কারণে অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বা আকস্মিক লিভার বিকল হওয়ার ঘটনাও দেখা গিয়েছে।
7
8
প্যাকেটজাত ফলের রস: ফলের রস মানেই স্বাস্থ্যকর, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ঠিক নয়। দোকান থেকে কেনা প্যাকেটজাত ফলের রসে ফলের চেয়েও বেশি থাকে চিনি বা কর্ন সিরাপ এবং প্রিজারভেটিভ। প্রাকৃতিক ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে, তা এই রসগুলিতে প্রায় থাকেই না। ফলে এই পানীয়গুলিও লিভারে চর্বি জমার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
8
8
সুতরাং, চিকিৎসকদের পরামর্শ, লিভারকে সুস্থ রাখতে শুধুমাত্র মদ্যপান ত্যাগ করলেই চলবে না। দৈনন্দিন জীবন থেকে এই আপাত নিরীহ অথচ বিপজ্জনক পানীয়গুলিকেও বিদায় জানানো অত্যন্ত জরুরি। এর পরিবর্তে সাধারণ জল, ভেষজ চা বা বাড়িতে তৈরি টাটকা ফলের রসের উপর ভরসা রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।