আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাপানিদের আয়ু এবং জীবনযাত্রা নিয়ে বহির্বিশ্বে আগ্রহের অন্ত নেই। কীভাবে এত সুস্থ থাকেন তাঁরা? আসলে জাপানে একাধিক প্রথা রয়েছে যেগুলি মেনে চললে শরীর ভাল থাকে। তেমনই একটি রীতি জাপানের 'হারা হাচি বু'। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের নীতি। জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপের লোকেরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই দ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মানুষদের অন্যতম আবাসস্থল। হারা হাচি বু-এর মূল ধারণা হল পেট সম্পূর্ণ ভর্তি না করে, কেবলমাত্র ৮০ শতাংশ ভরা হলেই খাওয়া থামিয়ে দেওয়া।
2
9
১। হারা হাচি বু পদ্ধতির মূলনীতি ৮০ শতাংশ পূর্ণতায় থামুন: এই পদ্ধতির মূল ভিত্তি হল পেট পুরোপুরি না ভরে, কিছুটা ফাঁকা থাকা অবস্থায় খাওয়া বন্ধ করা। জাপানি ভাষায় "হারা হাচি বু" এর আক্ষরিক অর্থ হলো "পেট আট ভাগ পূর্ণ"। কেবলমাত্র যখন আপনার শরীর ক্ষুধার সংকেত দেবে তখনই খাবার গ্রহণ করুন। আবেগ বা অভ্যাসের বশে খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
3
9
২। মনোযোগী ভোজন: হারা হাচি বু শুধুমাত্র কতটা খাচ্ছেন তার উপর জোর দেয় না, বরং কীভাবে খাচ্ছেন তার উপরও গুরুত্ব আরোপ করে। খাওয়ার সময় খাবারটির স্বাদ, গন্ধ এবং টেক্সচারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাড়াহুড়ো করে বা অন্যমনস্ক হয়ে খাওয়া উচিত নয়। প্রতিটি খাবারের স্বাদ উপভোগ করুন। খাওয়ার সময় অন্য কোনও কাজ (যেমন টিভি দেখা বা মোবাইল ব্যবহার করা) করবেন না।
4
9
৩। ধীরে ধীরে খাওয়া: তাড়াহুড়ো করে খেলে পেট ভরল কি না তা বুঝতে বেশি সময় লাগে। ধীরে ধীরে খেলে পেট শরীরকে সংকেত দেওয়ার যথেষ্ট সময় পায়, যে যথেষ্ট হয়েছে আর নয়। প্রতিটি কামড়ের স্বাদ নিন এবং ভালভাবে চিবিয়ে খান। শুধুমাত্র পরিমাণে কম খেলেই হবে না, স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করাও জরুরি।
5
9
৪। ক্ষুধার সংকেতের প্রতি মনোযোগ: কখন খিদে পাচ্ছে এবং কখন পেট ভরছে, এই সংকেতগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। সত্যিকারের ক্ষুধা অনুভব না করলে খাওয়া উচিত নয়। একইভাবে, যখন মনে হবে ৮০ শতাংশ পেট ভরেছে, তখন খাওয়া থামানো উচিত। এছাড়া ছোট থালা ব্যবহার করতে পারেন। ছোট থালায় খাবার নিলে স্বাভাবিকভাবেই কম পরিমাণে খাওয়া হয়।
6
9
৫। হারা হাচি বু পদ্ধতির উপকারিতা একাধিক। তার মধ্যে অন্যতম ওজন নিয়ন্ত্রণ। কম ক্যালোরি গ্রহণ করার ফলে এটি ওজন কমাতে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। নিয়মিতভাবে কম খেলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না। শরীর হালকা বোধ করলে অলসতা কমে এবং দিনের বেলা আরও বেশি শক্তি পাওয়া যায়।
7
9
৬। দীর্ঘ জীবন: ওকিনাওয়ার দীর্ঘজীবী মানুষেরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। গবেষণা দেখিয়েছে যে ক্যালোরি গ্রহণ সীমিত করার সঙ্গে দীর্ঘ জীবন এবং বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
8
9
৭। রোগ প্রতিরোধ: অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ শরীরের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। হারা হাচি বু অনুসরণ করলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে পারে।
9
9
৮। জাপানি সংস্কৃতিতে খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। হারা হাচি বু কেবল একটি ব্যক্তিগত অভ্যাস নয়, এটি দীর্ঘকাল ধরে ওকিনাওয়ার মানুষের জীবনযাত্রার একটি অংশ। এটি তাদের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের অন্যতম রহস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। পরিশেষে বলা যায়, হারা হাচি বু একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী খাদ্যাভ্যাসের নীতি যা আমাদের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।