বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দিরের তোষখানা খোলা হয়েছিল ৫৪ বছর পর। গত ১৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যখন সেই দরজা খোলা হয়েছিল, সকলেই ভেবেছিলেন বহু মূল্যবান মণিমানিক্য, সোনাদানা উদ্ধার হবে। পাওয়া গিয়েছিল একটি কাঠের বাক্স। আর কিছুই না, গোটা ঘর খালি। মন্দিরের পুরোহিত এবং কেয়ারটেকার জানান, মন্দিরের সব সোনা এবং টাকা স্টেট ব্যাঙ্কে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ১৯৭১ সালে।
2
10
ভারতের বৈচত্র্যময় সংস্কৃতিতে এমন বহু মন্দির রয়েছে যেখানে আজও এমন অনেকে রহস্য লুকিয়ে আছে। অনেকেই ভাবেন মন্দিরের ভল্টে সোনা, রুপো রাখা রয়েছে। বা এমন কোনও রহস্য চাপা পড়ে রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে।
3
10
কেরলের রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে অবস্থিত শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির দেশের অন্যতম ধনী মন্দির। ত্রিবাঙ্কুরের রাজা অষ্টম শতাব্দীতে মন্দিরটি তৈরি করেন। এর গর্ভগৃহের নীচে ছ’টি গ্রানাইটের ভল্ট রয়েছে। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাঁচটি ভল্ট খোলা হয়। সেখানে এক হাজার কেজির সোনার মূর্তি, হীরেখচিত মুকুট, ১৮ ফুট লম্বা সোনার চেন এবং একটি দুর্মূল্য বেলজিয়ান হীরে। যার মূল্য প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা।
4
10
কিন্তু একটি ভল্ট (ভল্ট বি) এখনও খোলা হয়নি। লোকগাঁথা মতে, একটি বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণের পরেই সাপ আঁকা দরজাটি খোলা সম্ভব হবে। ওই ভল্টে কী রয়েছে তা জানা যায়নি আজও।
5
10
দ্বাদশ শতাব্দীতে রাজা অনন্তবর্মন দেবা পুরীর জগন্নাথ মন্দির তৈরি করেন। মন্দিরের রত্নভাণ্ডারে ধনসম্পদ রাখা হয়। দু’টি ভল্ট সম্পন্নন এই রত্নভাণ্ডার ভিতরের ভল্টটি শেষ বার খোলা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। সেখান থেকে ১৪০ কেজি সোনা এবং রুপোর গয়না পাওয়া গিয়েছিল। বাইরের ভল্টটি আদালতের নির্দেশে ২০২৪ সালের এপ্রিলে খোলা হয়। সেখান সাড়ে ১২ কেজি সোনা পাওয়া যায়। ওই সময় মন্দির চাবি খোয়া যাওয়া নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছিল।
6
10
১৮০১ সালে একজন মহিলা সন্তানলাভের জন্য প্রার্থনা করে মুম্বইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এটি এখন ভারতের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা মন্দির। মন্দির গণেশ বিগ্রহের নীচে একটি আধুনিক ভল্ট রয়েছে যেটি বায়োমেট্রেক লক এবং সিসিটিভির নিরাপত্তাধীন। মন্দিরের ভল্টে ১৫৮ কেজি সোনা রয়েছে। যা ভক্তদের নৈবেদ্য থেকে গলিয়ে রাখা হয়েছে। বম্বে পাবলিক ট্রাস্ট অ্যাক্টের আওতায় প্রতি বছর ভল্টের অডিট করা হয়।
7
10
কেরলের ত্রিশূরের গুরুবায়ুর শ্রীকৃষ্ণ মন্দির একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ১৬৩৪ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়। ২০১৯ সালের একটি অডিটে মন্দিরের রত্নভাণ্ডারে ৬০০ কেজি সোনা এবং আড়াই হাজার কেজি রুপোর হিসেব মেলে। এই রত্নভাণ্ডারের দেখাশোনা করে কেরল দেবোত্তম বোর্ড।
8
10
১৭৮০ সালে অহল্যাবাই হোলকার কাশি বিশ্বনাথ মন্দির র্নির্মাণ করেন। মন্দিরের রত্নভাণ্ডার নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। মন্দিরের করিডোর পুনর্নির্মাণের সময় প্রাপ্ত শিল্পকর্ম প্রত্নতত্ত্ববিদরা লিখিত হিসেব রাখলেও মন্দিরের কোনও সম্পদের হদিস মেলেনি।
9
10
১০১০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে চোলা সম্রাট রাজা রাজা প্রথম দ্বারা নির্মিত তামিলনাড়ুর থাঞ্জাবুরের বৃহদেশ্বর মন্দির ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। ২১৬ ফুট লম্বা মন্দিরের নীচে লুকিয়ে রয়েছে নানা রহস্য। অষ্টাদশ শতকে এই মন্দিরের রত্নভাণ্ডার সিল করে দেওয়া হয়েছিল। পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের ভল্ট খোলার পর এই মন্দিরের রত্নভাণ্ডার খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করা হয়। কিন্তু রহস্য উন্মোচিত হয়নি আজও।
10
10
অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালা ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে কোনও লুকনো ঘর নেই। পঞ্চদশ শতাব্দীতে তৈরি মন্দিরটি বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসনকালে বিস্তৃত হয়। এখানে ২২টি দানপাত্র রয়েছে। সারাদিনে তিন বার খালি কর হয় সেগুলিকে। ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানের কাছে ১১ হাজার কেজি সোনা (সোনার গয়না গলিয়ে বিস্কুট তৈরি করে ব্যাঙ্কে জমা রাখা আছে) এবং ১৩ হাজার কোটির ফিক্সড ডিপোজিট আছে। ১৯৫১ সাল থেকে প্রতি বছর অডিট করা হয়।