ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে কমল হাসন ও শ্রীদেবী-র অনস্ক্রিন জুটি এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ১৯৮৩ সালের ক্লাসিক ছবি ‘সদমা’ আজও আবেগঘন অভিনয়ের নিদর্শন হিসেবে প্রশংসিত হয়। ছবিতে তাঁদের রসায়ন এতটাই অনবদ্য ছিল যে দর্শকেরা যেমন মুগ্ধ হয়েছিলেন, তেমনি নাকি শ্রীদেবীর মা-ও মনে মনে ভীষণভাবে চেয়েছিলেন, বাস্তব জীবনেও যেন কমল আর শ্রীদেবী পরস্পরকে বিয়ে করুক!

 

শ্রীদেবীর মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে লেখা এক হৃদয়স্পর্শী চিঠিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং কমল হাসন। শিরোনাম ছিল “দ্য টোয়েন্টি এইট অবতারস অফ শ্রীদেবী”। সেই চিঠি তিনি প্রকাশ্যে পাঠ করেছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রীর স্মরণসভায়, যেখানে তিনি তুলে ধরেছিলেন তাঁদের বহু বছরের বন্ধুত্ব, কাজের সম্পর্ক এবং সেই পরস্পরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার কথা।

 

চিঠিতে কমল লিখেছিলেন, “শ্রীদেবীর মা প্রায়ই বলতেন,‘তোমাদের দুজনের এত সুন্দর বোঝাপড়া, তোমরা কেন পরস্পরকে বিয়ে করছ না?’ কিন্তু আমি সবসময়ই তা এড়িয়ে যেতাম। আমার কাছে শ্রীদেবী ছিল পরিবারের একজন। ওকে বিয়ের কথা ভাবা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল।” তিনি আরও যোগ করেছিলেন, “আমাদের সম্পর্কটা প্রেম নয়, ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ওপর দাঁড়ানো। ওর প্রতিও আমার সেই শ্রদ্ধা অটুট ছিল, যতদিন বেঁচেছিল। এবং আমার প্রতি ওর-ও।” অভিনেতার কথাতেই জানা যায়, নাম ধরে ডাকার পরিবর্তে শ্রীদেবী তাঁকে স্যার বলে ডাকতেন। 


তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৭৬ সালে, পরিচালক কে. বালাচন্দর-এর তামিল ছবি ‘মুন্দ্রু মুদিচু’-র সেটে। তখন শ্রীদেবীর বয়স মাত্র ১৩ বছর, অভিনয়ের জগতে একেবারে নবাগত। অন্যদিকে কমল হাসান তখন শুধু সহ–অভিনেতা নন, সেই ছবিতে সহ–পরিচালক হিসেবেও কাজ করছিলেন। পরিচালক বালাচন্দর তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন ছোট্ট শ্রীদেবীকে সংলাপ ও দৃশ্য অনুশীলনে সাহায্য করার।সেই থেকেই শুরু তাঁদের এক অদ্ভুত বন্ধন যেখানে বয়স, সাফল্য, তারকাখ্যাতি সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল কেবল শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা।

 

বছরের পর বছর ধরে এই জুটিকে দেখা গেছে একসঙ্গে বহু প্রশংসিত ছবিতে ‘মুন্দ্রাম পিরাই’ তাঁদের অন্যতম, যা পরে হিন্দিতে নির্মিত হয় ‘সদমা’ নামে। ছবিটি আজও রয়ে গেছে ভারতীয় সিনেমার এক অমর অধ্যায় হিসেবে, যেখানে কমল ও শ্রীদেবীর নিঃস্বার্থ অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে চিরকাল অমলিন।


অন্যদিকে, কুলি ছবির প্রচারে এসে কমল-কন্যা অভিনেত্রী শ্রুতি হাসন দাবি করেছিলেন অপর্ণা সেনকে , “অপর্ণা সেনকে বাবা শ্রদ্ধা করেন, পছন্দও করেন তাঁকে। শুনেছি, সেই আগ্রহেই নাকি বাংলা ভাষা শিখেছিলেন।” কমল-কন্যার মতে, তাঁর বাবা মাত্র একটি বাংলা ছবি করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘কবিতা’।বেশির ভাগ মানুষ জানেন, এই ছবির জন্যই কমল বাংলা শিখেছিলেন। কিন্তু এই কারণ আংশিক! এখানেই শেষ নয়। শ্রুতির আরও বক্তব্য, “বাবা শুধুই বাংলা শিখে থেমে যাননি। তাঁর ছবি ‘হে রাম’-এ নায়িকা রানি মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রের নাম ‘অপর্ণা রাম’!” শ্রুতির এই বক্তব্য ভাইরাল হতেই এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে অপর্ণা সেন অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে কমল হাসন একজন গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। এই ধরনের মানসিকতার মানুষ তিনি নন। হয়তো কখনও রসিকতা করে কিছু বলে থাকতেও পারেন। ব্যস এটুকুই।