বাংলাদেশে বাড়তে থাকা উত্তেজনা ও উন্মত্ততার আবহে নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করলেন প্রখ্যাত হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী উস্তাদ রশিদ খানের পুত্র আরমান খান। ইনকিলাব প্ল্যাটফর্মের কনভেনর শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

 

গত বৃহস্পতিবার রাতে শরিফ বিন হাদির মৃত্যু সংবাদ সামনে আসতেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। পরিস্থিতি দ্রুত হিংসাত্মক রূপ নেয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের অফিসে হামলা চালানো হয়। ঢাকায় একাধিক সংবাদপত্রের দপ্তরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি হামলার শিকার হয় সে দেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে ধানমন্ডিতে ছায়ানটের সাততলা ভবনে ৫০–৬০ জনের একটি দল হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভবনের নিচতলা থেকে শুরু করে একে একে সব কক্ষে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। চেয়ার, টেবিল, দরজা, জানালা ভাঙার পাশাপাশি তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা–সহ নানা বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একাধিক জায়গায় আগুন লাগানো হয়। পুড়ে যায় বই ও সঙ্গীত সামগ্রী। ছিঁড়ে ফেলা হয় ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সনজিদা খাতুন ও লালনের ছবি। হামলার সময় নানা উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সে দেশের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন।

 

এই অস্থিরতার মধ্যেই ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে তাঁর নির্ধারিত পারফরম্যান্স ছিল। কিন্তু আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা বিবেচনা করেই সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত জানান আরমান খান। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন ভারতে থাকার জন্য স্বস্তি পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “আমি ভাবতেও পারিনি বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে। যাদের মানুষের কাছে প্রভাব আছে, যাদের জনগণের একটি বড় অংশ শ্রোতা হিসেবে রয়েছে, সেই সব শিল্পীর এখন-ই অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।”

 

বাংলাদেশে চলমান উত্তেজনা সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিল্পীদের একাংশ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন।বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংস প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘু সমাজের ওপর প্রভাব নিয়েও কথা বলেন আরমান খান। তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের সঙ্গে যা ঘটছে, তা হওয়া উচিত নয়। মানুষ আগে মানবতাকে ভাবুক, তারপর ধর্ম।” অন্য আর একটি সাক্ষাৎকারে রশিদ-পুত্র বলেছেন, “আর কোনওদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখব না।”

 

 

 

একদিকে অস্থিরতা, অন্যদিকে শিল্প ও সংস্কৃতির ওপর তার প্রভাব, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে সাংস্কৃতিক পরিসরে গভীর দাগ ফেলছে তা স্পষ্ট। তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও মানবতা, সহমর্মিতা ও নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন শিল্পীরা।


বাংলাদেশের পাশাপাশি এদেশেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিল্প ও সংস্কৃতির পীঠস্থান বলে পরিচিত বীরভূমের শান্তিনিকেতনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ধরেই নিবিড় সম্পর্ক। সনজিদা খাতুনের সঙ্গেও বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের বহু মানুষের গভীর ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। ‌তাই ছায়ানটে বর্বরোচিত আক্রমণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও আশ্রমিকরা সরব হয়েছেন। আজকাল ডট ইন–এর তরফে যোগাযোগ করা হলে এই নিয়ে মুখ খুলেছেন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মোহন সিং খাঙ্গুরা ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য।