২০০০ সাল বাঙালির শুরুই হয়েছিল জমজমাট বাংলা ছবি ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর মাধ্যমে। বাংলা ছবির ইতিহাসে রেকর্ড তৈরি করেছিল প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার এই ছবি। প্রেক্ষাগৃহগুলো উপচে পড়েছিল দর্শকের উন্মাদনায়। ছবি সমালোচকদের মতে, হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালিত এ ছবি ধুঁকতে থাকা টলিপাড়ার ফুসফুসে নতুন বাতাস ভোরে দিয়েছিল। টলিউডের হিট জুটি প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার এই জনপ্রিয় ছবির রি-রিলিজ হল গত শুক্রবার। স্পেশ্যাল শো-তে উপস্থিত ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, হরনাথ চক্রবর্তী, অনামিকা সাহা-সহ একঝাঁক তারকা। ছবির জনপ্রিয় ‘চোখ তুলে দেখো না’ গানে জমিয়ে নাচলেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। চোখ তুলে দেখো না কে এসেছে…’ এই গানের সুরে আজও জিয়া নস্ট্যাল হয় বহু বাঙালির। কত দিনে শুট হয়েছিল এই ছবি? এই ছবির উপরেই কি নির্ভর করেছিল বাংলার বুকে ছবির ব্যবসায় ভেঙ্কেটেশ ফিল্মস থাকবে কি না?  ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর কি সিক্যুয়েলের পরিকল্পনা করেছেন পরিচালক? সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর বহু অজানা ঘটনা আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। 

 


খানিক ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল বর্ষীয়ান পরিচালককে। এই ছবির প্রসঙ্গ উঠতেই মৃদু স্বরে তিনি বলে উঠলেন, “সেই সময় পরপর কয়েকটা ছবি মুখ থুবড়ে পড়েছে ভেঙ্কটেশ প্রযোজনা সংস্থার। তাঁরা একপ্রকার ঠিকই করে নিয়েছেন টলিপাড়া থেকে নিজেদের পাততাড়ি তুলে নেবেন। কারণ প্রচুর লোকসান হয়েছিল তাঁদের। সেই সময় প্রসেনজিৎ এক বৈঠক ডাকেন। আমাকেও ডাকা হয়। সবাই মিলে ঠিক করলাম, একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক। তারপর তো বাকিটা ইতিহাস...আমার টিম, ইউনিটের সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল! স্বল্প বাজেটের এই ছবি দু কোটি-আড়াই কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল!”

 


“তখনকার দিনে আমার একেকটি  ছবি শুট করতে লাগত ৪৫ দিনের আশেপাশে। তবে শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর গোটা শুটিংপর্ব শেষ করেছিলাম ৩১ দিনে। আর একটা কথা, বাংলা ছবির ইতিহাসে শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ কিন্তু প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি! তখন একমাত্র হিন্দি ছবিই হতো সিনেমাস্কোপে। কিন্তু শ্রীকান্ত-মণি কিন্তু সেইসব উচ্চমানের ক্যামেরা, লেন্স ভাড়া করে নিয়ে এসেছিল।”

 


এখনকার সময়ে কেন আর একটা ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ তৈরি হয় না? খানিক থেমে হরনাথ বলে উঠলেন, “তখন সিনেমা ছাড়া আর বড় কোনও বিনোদনের অপশন ছিল না মানুষের কাছে। আর প্রেক্ষাগৃহে তাঁরা স্টেন ভালবেসে, একরাশ আগ্রহ নিয়ে। এখন তো বিনোদনের কত রকমফের। তার উপরে আঙুলের ডগাতেই  বিশ্ব-বিনোদনের হদিশ। সব ওই মোবাইল... সময়ের পরিবর্তন...সভ্যতার অগ্রগতি আর কী! তাই বাংলা ছবি নিয়ে আগ্রহ তো কমেইছে। প্রেক্ষাগৃহে যেতে একপ্রকার ভুলেই যাচ্ছেন বাঙালি দর্শক।  আর একটা কথা, এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ তৈরির জন্য যে বাজেট দরকার, সেরকম লগ্নি করতে ভয় পাচ্ছেন প্রযোজকেরা।” আর এই প্রজন্মের পরিচালকেরা?  পরিচালকের সপাটে জবাব  - “এখনকার সময় পরিচালকেরা না বাণিজ্যিক ছবি করছেন না অন্যধারার। দুয়ের মাঝামাঝি একটা জায়গায় ছবি বানাচ্ছেন। দর্শক জানেনই না, তাঁরা ঠিক কী দেখতে যাচ্ছেন। আর তাতেই হল ফাঁকা থাকছ।” 

 


‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর কি সিক্যুয়েলের পরিকল্পনা করেছেন পরিচালক? খানিক হেসে জবাব এল, “নাহ! সিক্যুয়েল হবে না। সেটা করাটা খুব মুশকিল। কারণ প্রসেনজিৎ আর ঋতুকে তো ওই বয়সে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। ওই ম্যাজিকটা আমার জানা নেই। তবে  এই ছবির সব শিল্পীদের নিয়ে অন্য গল্পের ছবি তৈরি করতেই পারি। এক স্টারকাস্ট নিয়ে অন্য ছবি তৈরি করতেই পারি, যদি প্রযোজক চান।”