এককথায় স্বপ্নপূরণ। ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। রবিবার নবি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন হরমনপ্রীত কৌর, জেমাইমা, মন্ধানারা। এই অকল্পনীয় জয়ের কারণে বলা হচ্ছে, এই বিশ্বকাপ নাকি মহিলা ক্রিকেটবিশ্বের বাজারে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে! পরিবর্তন আসবে কি না, সময় বলবে। তবে এইমুহূর্তে এই জয়ে শামিল গোটা দেশ। তা এই জয় কি দেশের লক্ষ লক্ষ মেয়েকে জীবনসংগ্রামে না হারতে উদ্বুব্ধ করবে? এই জয় কি সমাজে মেয়েদের প্রতি বৈষম্যর পাল্লাকে লঘু করে পুরুষদের সঙ্গে সাম্যের নিক্তিতে সমান সূচকে আন্তে পারবে? আদৌ কি এই জয় পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে ঝাঁকুনি দিয়ে রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবে? খোলা মনে নিজেদের মতামত জানালেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র এবং বসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়। 


 বরাবরই নিজের চিন্তাভাবনা সপাটভাবে প্রকাশ করেন শ্রীলেখা। এবারেও সেই ছন্দে অভিনেত্রী বলে উঠলেন, " মেয়েরা কিন্তু আজকাল শুধু মেয়ে হিসেবে বাঁচছে না। তাঁরা পুরুষদের সমকক্ষ হয়ে বাঁচছে। মহিলারা শুধু ঘর সামলাবে, সংসার করবে এই প্রথাগত  ভাবনাকে দূরে ঠেলে সে বাইরে কাজও করছে, লড়াইও করছে ময়দানে। যাঁরা ভেবেছিলেন মেয়েদের দ্বারা ক্রিকেট খেলাটা ঠিক হয় না, তাঁরা আজ নিশ্চয়ই লজ্জা পাচ্ছেন। কারণ তাঁরা বুঝতে পারেনি মেয়েরা এতদূর পৌঁছে যাবে, সাফল্য পাবে। এটা ভেবেই খুব আনন্দ পাচ্ছি আজকের পর থেকে বিরাট-রোহিতের মতো হরমনপ্রীত কৌর, জেমাইমাদের নামটাও উচ্চারিত হবে একসঙ্গে। এখন এঁরা লক্ষ লক্ষ মেয়ের রোল মডেল হয়ে গেলেন। আগামী প্রজন্মের মেয়েরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়র হওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটারও হতে চাইবে। তবে একথাটাও কিছু মেয়ে রয়েছেন যারা মেয়ে হওয়ার সুবিধেটা এখনও নিচ্ছে! সেটা তারা ব্যবহার করে লোককে বোকা বানানো, নিজের আখের গুছোনো -এটাই কিন্তু হচ্ছে। আমি তো আজও প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছি। এই পেশায় আসার পর সৎ থাকার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাকে প্রতিদিন।  


ফিরি এই বিশ্বকাপ জয়ের কথায়। বহু মেয়েদের লড়াইয়ের স্পর্ধা কিন্তু বাড়াল ভারতের মহিলা দলের এই বিশ্বজয়। তবে এই কথাটাও স্পষ্ট করে বলে দিই, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রতি যে বৈষম্যতা, মেয়েদের যেভাবে লাঞ্ছনা করার চেষ্টা করা হয়....সেই বিষয়টার খুব একটা পরিবর্তন হবে না! যারা এসব করে, তারা এসবই করে যাবে। বোধোদয় হবে না তাদের। হওয়ার হলে, অনেক আগেই হতো। হয়তো বাজি ফাটাবে একটু বেশি...বড়জোর এই হবে। এই জয়ের পরেই সেই বিষয়টি রাতারাতি হবে, এ অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়! 

 

শুরু থেকেই বেছে কাজ করেন তিনি। তা সে সিনেমা হোক, ছোটপর্দা হোক অথবা ওয়েব সিরিজ। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ‘আসা যাওয়ার মাঝে’, ‘রক্তরহস্য’, ‘অভিযান’ এর মতো ছবি। তিনি, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এটা ঠিক, এই জয় একটা অন্যরকম জয় তো বটেই। গর্বের বিষয়, অন্যরকম অনুভূতি।  বাইশ গজ পেরিয়ে অনেক বৃহত্তর ক্ষেত্রে জয়ের প্রতীক এই ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের  বিশ্বজয়। তবে এটাও ঠিক, এখন মহিলারা যেকোনও ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করছে তাতে সেখানে তারা নিজেদের ছাপ ফেলে আসছে। সমাজের প্রথাগত যে ধ্যান ধারণা, যেমন পুরুষরা বাজার করবে আর নারীরা রান্না করবে শুধু -এই ভাবনাকেও চ্যালেঞ্জ জানায় এই জয়। তাই একজন মহিলা হিসেবে এই জয় আমার কাছে খুবই গর্বের, খুবই আনন্দের। তবে হ্যাঁ, এরপরেও আমি একটা কথা বলতে চাই। মেয়েদের এই জয়ের পর হয়তো অনেকেই বাহবা দেবে, অনেক ভাল-ভাল কিছু বলবে কিন্তু কোথাও গিয়ে দিনের শেষে মেয়েদের নিয়ে সার্বিকভাবে কিছু নির্দেশ বহাল থেকেই যাবে, কিছু বদ্ধমূল ধ্যান ধারণার শিকড় আলগা হবে না। যেমন, 'এখনও কোনও মেয়েকে বলা হবে রাত ৯টার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যাও'। তাই এই ঘটনার জেরে সমাজের কোনও আমূল পরিবর্তন হবে, মেয়েদের দেখার-বোঝার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে যাবে বলে আমার মনে হয় না! দিনের শেষে ছেলে-মেয়ের বিভাজনটা সমাজে থেকেই যাবে। সমাজ করবে, আমার অন্তত মনে হয়। কারণ এসব পরিবর্তন হওয়ার হলে, এতদিনে হয়ে যেত! সেটা যখন হয়নি, তখন এই ঘটনা এক লহমায় সেসব বদলে দেবে, তা ভাবতে পারছি না। বড় বড় কথা হবে কিন্তু আবার কিছুদিন পরেই মেয়েদের শুনতে হবে, 'তোমাকে মানিয়ে নিতেই হবে!’”