‘ওম শান্তি ওম’ — শাহরুখ খানের অনুরাগীদের কাছে শুধুই একটি সিনেমা নয়, এটি এক আবেগ, এক স্বপ্নের রঙিন দুনিয়া। কিন্তু সেই স্বপ্নের পিছনেও ছিল জ্বলন্ত আতঙ্ক আর ভয়ানক টেনশন। ছবির ক্লাইম্যাক্সে যেভাবে শাহরুখের ‘ওম’ আগুনের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীপিকার ‘শান্তিপ্রিয়া’কে বাঁচাতে যায়—সেই দৃশ্য আজও রোমাঞ্চ জাগায় দর্শকের মনে। তবে জানেন কি, সেই দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় সত্যিই ভয়ানক বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সকলে?
সম্প্রতি অ্যাকশন ডিরেক্টর শ্যাম কৌশল এক সাক্ষাৎকারে জানালেন, সে দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় তিনি এতটাই টেনশনে ছিলেন যে বুকে ব্যথা নিয়ে একাধিকবার কেঁদে উঠেছিলেন সেটের পাশে দাঁড়িয়ে!

“১০০ জন মানুষ জ্বলন্ত সেটে! ভগবানের নাম না নিয়ে পারিনি” সম্প্রতি, দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্যাম বলেন,“ওই সময় কোনও ভিএফএক্স ব্যবহার করা হত না। পুরো সেটটা আসল আগুনে জ্বালানো হয়েছিল। সেই সেটের ভিতর ছিলেন শাহরুখ খান, দীপিকা পাডুকোন, তিনজন ক্যামেরাম্যান, আর আমার ইউনিটের ৬০ জন সদস্য। অর্থাৎ প্রায় ১০০জন মানুষ একসঙ্গে ছিলেন জ্বলন্ত সেটের ভিতর।”তিনি আরও বলেন, “আমি এতটাই টেনশনে ছিলাম যে বহুবার একপাশে সরে গিয়ে গিয়ে কেঁদে ফেলেছি। মনে হচ্ছিল হার্ট অ্যাটাক হবে! কারণ আগুন লাগানো মাত্রই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটা নিভিয়ে ফেলতে হত। কেউ যদি একটুও গাফিলতি করে, চরম বিপদ ঘটতে পারত।”
২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফারাহ খানের ‘ওম শান্তি ওম’ ছবিতে দীপিকা পাডুকোন বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। প্রেম, প্রতিশোধ, পুনর্জন্ম—সব কিছু মিলিয়ে এক অনন্য ফ্যান্টাসি সিনেমা হয়ে ওঠে এটি। সেইসঙ্গে, ছবির একটি বড় আকর্ষণ ছিল ক্লাইম্যাক্সের আগুনের মধ্যে তোলা জীবন্ত অ্যাকশন সিকোয়েন্স, যা আজকের দিনে হলে হয়তো সহজেই ভিএফএক্স-এ করা যেত, কিন্তু তখন পুরোপুরি রিয়েল সেটে আগুন লাগিয়ে করা হয়েছিল।
'ওম শান্তি ওম'-এর এই দৃশ্য ছিল বলিউডের সবচেয়ে বিপজ্জনক শুটিংগুলোর একটি! এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে যে, অভিনেতা-প্রযুক্তিবিদ-টেকনিশিয়ানদের সাহস আর পরিশ্রম ছাড়া সিনেমার ম্যাজিক সম্ভব নয়। সেইদিনের সেই ঝুঁকির মধ্যে থেকেও শাহরুখ-দীপিকা-শ্যাম কৌশলের টিম যে দৃশ্যটি দর্শকদের উপহার দিয়েছিল, তা আজও ইতিহাস।
প্রসঙ্গত, এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের যে গল্প শ্যাম কৌশল কিন্তু পরে সেই রাতে নিজেই নিজেকে বোঝান, মৃত্যুর ভয় নয়, আশার আলোয় এগিয়ে যেতে হবে। পরদিন সকালে তিনি যেন নতুন মানুষ হিসেবে জেগে ওঠেন। বললেন, তা কোনও হাই-অকটেন স্টান্ট নয়, বরং এক নিঃসঙ্গ ও ভয়াবহ যুদ্ধের দলিল।এক সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি, যেখানে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, বাঁচার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সেই মানসিক ধাক্কায় ভেঙে পড়ে শ্যাখম কৌশল এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলেন যা শুনলে শিউরে উঠতে হয়—তিনি ভেবেছিলেন হাসপাতালের তৃতীয় তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন!একটি অপারেশনের পর ২০০৩ সালে নিজের শরীরে বাসা বাঁধা ক্যানসারের খবর পান শ্যাম কৌশল। তিনি জানান, সেই সময়টা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়।
তাঁর কথায়, “ডাক্তাররা সন্ধ্যেবেলা খবরটা দিলেন। রাতে আমি ভাবছিলাম, যখন মরতেই হবে, তখন এখনই ঝাঁপ দিই না কেন? কিন্তু অস্ত্রোপচারের যন্ত্রণায় আমি নিজেকে নড়াতে পারছিলাম না। তাই সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারিনি।” “ভগবান, আমাকে এখানেই নিয়ে যাও… “-সেই সময়ে মনে মনে প্রার্থনা করে চলেছিলেন ভিকি কৌশলের বাবা। হাসপাতালের ঘরের নিঃসঙ্গ নির্জনতায় তিনি প্রার্থনা করেন—ঈশ্বর যেন তাঁর প্রাণ সেখানেই নিয়ে নেন। কারণ তিনি মনে করতেন, “জীবনটা ভালই কাটিয়েছি, এবার শেষ হোক।”
