দিল্লির রাস্তায় এবার থেকে শুধুই দেখা যাবে মানুষ এবং সারি সারি গাড়ি। দেখা যাবে না পথকুকুর। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে দিল্লি-এনসিআর এলাকার সব রাস্তার কুকুরকে আট সপ্তাহের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমাজের একাংশ ও বেশ কিছু তারকা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানালেও, ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা রাম গোপাল ভার্মা।

 

‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক দীর্ঘ নোটে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন— “যখন রাস্তায় ছোট ছোট শিশুদের উপর কুকুরের হামলা হয়, তখন এই তথাকথিত কুকুর প্রেমিকরা কোথায় থাকেন?”

 

‘রামু’র সাফ বক্তব্য, “হে কুকুর প্রেমিকগণ, আপনারা আজ কুকুরদের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। কিন্তু সেই সময় কোথায় ছিলেন, যখন দিনের আলোয় এক চার বছরের বাচ্চাকে নৃশংসভাবে পথকুকুররা  মেরে ফেলল? প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে কুকুর আক্রমণ করে। তখন কোথায় ছিল আপনাদের মমতা? না কি দোলানো লেজওয়ালা প্রাণীদের জন্যই কেবল আপনারা করুণা দেখান, মৃত শিশুদের জন্য নয়?”

 

তিনি আরও লেখেন, “কুকুর ভালবাসায় কোনও দোষ নেই। আমিও ওদের ভালবাসি। কিন্তু সেই ভালবাসা আপনার নিজের বাড়ির ভেতর সীমাবদ্ধ রাখুন। আপনার বিলাসবহুল বাংলোয়, সাজানো লনে, দামি ল্যাব্রাডর বা হাস্কির সঙ্গে সেই ভালবাসা ভাগ করে নিন। রাস্তার উপরে কুকুর রেখে আপনার আবেগ মেটাবেন না।”

 

রামু স্পষ্ট করেছেন, এই কুকুর-সঙ্কট আসলে গরিব মানুষদের দুঃস্বপ্ন। তাঁর ভাষায়, “আপনার প্রাসাদোপম বাড়িতে কুকুর আতঙ্ক নেই। সেটা ঘুরে বেড়ায় বস্তি আর অলি-গলিতে, যেখানে খালি পায়ে ছোট্টরা খেলতে নামে, যেখানে রক্ষার জন্য নেই কোনও গেট বা প্রাচীর। ধনীরা তাদের ঝকঝকে পোষ্যকে আদর করেন, কিন্তু গরিবেরা রক্তাক্ত ক্ষত সারায় কিংবা কবর খোঁড়ে।”

?ref_src=twsrc%5Etfw">August 16, 2025

 

‘ডগ রাইটস’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “কুকুরের অধিকার নিয়ে আপনারা কথা বলছেন, ঠিক আছে। কিন্তু শিশুর অধিকার? বাঁচার অধিকার? বাবা-মায়ের অধিকার তাঁদের সন্তানকে বড় হতে দেখার? আপনার ইনস্টাগ্রামে পোষা হাইব্রিড কুকুরকে জড়িয়ে ধরা ছবির চেয়ে এই অধিকার কি তুচ্ছ?”

 

শেষে ভার্মা কঠিন সুরে লেখেন, “সহানুভূতি যদি ভারসাম্যহীন হয়, তবে তা অবিচার। সত্যিই যদি কুকুর ভালবাসেন, তবে ওদের দত্তক নিন, ঘরে রাখুন, নিরাপদ আশ্রয় দিন। অথবা সরকারকে বাধ্য করুন যথাযথ সমাধান আনতে। কিন্তু আপনার আবেগের বোঝা যেন গরিবের রক্ত দিয়ে শোধ করতে না হয়। সমাজ যদি রাস্তায় কুকুরের প্রাণকে শিশুর প্রাণের চেয়ে বেশি মূল্য দেয়, তবে বুঝতে হবে— সেই সমাজ ইতিমধ্যেই মানবিকতা হারিয়েছে।”

 

উল্লেখ্য, ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পারদিওয়ালা ও আর মহাদেবনের বেঞ্চ কুকুরের ক্রমবর্ধমান হিংস্রতা নিয়ে কঠোর অবস্থান নেয়। নির্দেশে বলা হয়, আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে দিল্লি-এনসিআরের সমস্ত কুকুরকে ধরে বিশেষ আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হবে। কোনও প্রাণীকে আর মুক্ত করে দেওয়া যাবে না রাস্তায়। এমনকি এই অভিযানে বাঁধা দিলে ব্যক্তিগতভাবে বা কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা চলবে।

 

গত সোমবার পথকুকুরদের নিয়ে দিল্লি সরকার, দিল্লি পুরসভা এবং নয়া দিল্লি পুরসভাকে এ বিষয়ে কাজ শুরুর করার জন্য নির্দেশ শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ। এই কার্যক্রমে বাধা দিলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে দিল্লিতে কুকুরের কামড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই পথকুকুরদের আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করার জন্যও দিল্লি সরকার এবং পুর প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। 

 
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনেরবেঞ্চ জানিয়েছে, কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনও পক্ষের তরফে শুনানি হবে না। বেঞ্চের বক্তব্য, ‘আমরা এই কাজ আমাদের জন্য করছি না, এটি জনস্বার্থে। তাই এখানে কোনও আবেগের স্থান নেই। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে’। আদালতের বেঞ্চের স্পষ্ট বার্তা, ‘সব জায়গা থেকে কুকুরকে তুলে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। আপাতত নিয়ম-কানুন ভুলে যান’। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত যেন পথ কুকুর ধরতে শুরু করা হয়। তাদের যদি বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হয়, সেটা করুক। তবে এটা প্রথম ও প্রধান কাজ হতে হবে যাতে সমস্ত এলাকা পথ কুকুর মুক্ত হয়’। অন্যদিকে, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে জানিয়েছে পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস (পেটা)।