নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৮৮৩ সালে পথ চলা শুরু হয়েছিল স্টার থিয়েটারে। এরপর যত সময় গড়িয়েছে, ইতিহাস আষ্ঠেপৃষ্ঠে তত জড়িয়েছে তার নামের সঙ্গে। স্টার থিয়েটারের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন বিনোদিনী। এতটাই যে সেই সময়ে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল স্টার থিয়েটারের সঙ্গে নাম জোড়া হবে বিনোদিনীর। কিন্তু তৎকালীন সমাজের উচ্চবর্গীয় অংশের প্রতিবাদে শেষমেশ তা হয়নি। প্রায় দেড় শতক পর এবার তা হল। হাতিবাগানের সেই স্টার থিয়েটারের নাম বদলে হল ‘বিনোদিনী থিয়েটার’। আর হওয়ার একদিন পরেই সেখানে হাজির বিনোদিনী।
আগামী ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে রামকমল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বিনোদিনীর বায়োপিক ‘বিনোদিনী: একটি নটীর উপাখ্যান’। এটাই তাঁর প্রথম বাংলা ছবি পরিচালনা। ছবিতে নামভূমিকায় দেখা যাবে অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্রকে। ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে প্রথমবার বিনোদিনী রূপে সামনে এসেছিলেন রুক্মিণী মৈত্র। বুধবার নতুন বছরের সূচনায় কল্পতরু উৎসবকে স্মরণ করে সেই ছবির একটি নতুন পোস্টার মুক্তি করা হল বিনোদিনী থিয়েটারে। সেই পোস্টারে দেখা গেল ছবিতে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভূমিকায় অভিনেতা চন্দন রায় সান্যালকে।
রুক্মিণী বললেন, “সাত বছর হয়ে গেল এই ইন্ডাস্ট্রিতে, কোনও চরিত্রকে নিজের মধ্যে তিলে তিলে গড়ে তুলতে এতটা ভয় পাইনি ‘বিনোদিনী’র ক্ষেত্রে যতটা পেয়েছি। ২০১৯ সাল থেকে বিনোদিনী নিয়ে প্রথমবার কথা হয় রামের সঙ্গে। এর পরের পাঁচ বছর ছিল বিনোদিনীকে পর্দায় আনার যুদ্ধ। এই ছবি তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে বুঝেছি আজও একটি নারীকেন্দ্রিক ছবি তৈরি করতে গেলে কতটা কষ্ট করতে হয়। প্রচুর টানাপড়েন চলেছে। প্রচুর সিঁড়ি ভাঙতে হয়েছে বিনোদিনী তৈরির জন্য। বিভিন্ন প্রযোজকদের চৌকাঠে কাছে যখন এই ছবি নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সবার-ই প্রশ্ন ছিল ‘কেন একটা নায়ককেন্দ্রিক ছবির বাজেট দিয়ে একটা নারীকেন্দ্রিক ছবির পরিকল্পনা করা হচ্ছে? কোনও দর্শক পাবে না এই ছবি।’ কিন্তু হাল ছাড়েনি রামকমল। আর একটা কথা বলতে চাই, বছর তিনেক আগে রাম ই-মেল্ করে আমাকে এই ছবির চিত্রনাট্য পাঠিয়ে দিয়েছিল। সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, এই ছবির জন্য কোনও প্রযোজক পাচ্ছে না। তাই আমাকে পাঠানো রইল, কারণ বিনোদিনী ছবির প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। তাই যদি ভবিষ্যতে আমি করতে চাই এই ছবি তাহলে আমার পছন্দ মতো যেকোনও পরিচালকের সঙ্গে যেন করতে পারি! তবে আমিও ভেবে রেখেছিলাম যদি এই ছবি হয়, তাহলে পরিচালনা রাম-ই করবে। আর এই ছবি তো আমাদের কাছে শুধু ছবি ছিল না। ছিল বিনোদিনীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু ফিরিয়ে দেওয়ার একটি রাস্তা। আমার বিশ্বাস, আজ সেটা আরও বেশি করে উপলব্ধি করছেন আমাদের মতো বাকিরাওl”
সামান্য আবেগপ্রবণ হয়ে রুক্মিণী আরও বললেন, “এক সময় যখন ভেঙে পড়েছিলাম, তখন এগিয়ে আসে দেব। স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে ও।“ কথাশেষের আগে রুক্মিনীর সংযোজন, “আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজের প্রাপ্য সম্মান, স্বীকৃতিটুকু পেতে একজন মহিলাকে লড়ে যেতে হল ১৪০ বছর ধরে!” এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানাতে ভোলেননি তিনি, স্টার থিয়েটারের নামকরণ বদলের প্রসঙ্গে –“একজন নারীকে তাঁর যোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্য ইতিহাসকে পাল্টে দিলেন দিদি! এ জয় আমাদের নারীদের, আমাদের সমাজের।”
পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায় অল্প কথায় জানালেন, এ ছবিকে বিনোদিনীর জীবনী বললে ভুল হবে। কারণ ২০০-২৫০ বছরের পুরনো সব তথ্য তাঁরা পাননি। বিনোদিনীর জীবনের বেশ কিছু অধ্যায়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি। অত পুরনো বেশ কিছু কাগজপত্রও নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কালের অতলে হারিয়ে গিয়েছে। তাই বিনোদিনীর জীবনের সেই অংশটুকুর গল্প পর্দায় বুনতে বেশ কিছু জায়গায় কল্পনার আশ্রয় যে তাঁরা নিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছেন না পরিচালক। এই ছবির প্রযোজক হিসাবে দেবের অধ্যবসায়কেও কুর্নিশ জানাতে ভোলেননি তিনি। এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী সৌরেন্দ্র মল্লিক এবং সৌম্যজিৎ দাস। বিনোদিনী ছবির সুর পরিচালনার দায়িত্ব যৌথভাবে সামলেছেন তাঁরা।
