নতুন আর কমলিনীর মাঝে সে তৃতীয় জন। বলা ভাল, অযাচিত অতিথি। জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরসখা’য় পার্বতী তাই প্রথম থেকে দর্শকদের একাংশের চক্ষুশূল। এতদিন পর্যন্ত বিষয়টি ছিল পর্দার গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এবার গল্প আর বাস্তবের সীমারেখা যেন মুছে গিয়েছে। দর্শকদের একাংশ এখন ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন চরিত্র নয়, সরাসরি অভিনেত্রী কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই।

মাসখানেক হল ‘চিরসখা’-য় কমলিকার আগমন, আর সেই থেকেই বদলে গিয়েছে গল্পের মোড়। নতুন ওরফে স্বতন্ত্রর বাগদত্তা পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করে ফের আলোচনায় অভিনেত্রী। ধারাবাহিকে দেখা যায়, ছলে-কৌশলে পার্বতী নতুনের স্ত্রী হয়ে কলকাতায় চলে আসে। ফলে বাধ্য হয়ে নতুনের জীবন থেকে সরে যেতে হয় কমলিনীকে। এই মোড় ঘোরানো অধ্যায়ের পর থেকেই দর্শকদের একাংশের ক্ষোভ যেন উথলে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে পার্বতী চরিত্রকে ঘিরে ট্রোল, কটাক্ষ ও নানা মন্তব্যের ঝড়। কমলিকার কথায়, “২৬ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি। ধারাবাহিক থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক, আন্ডারগ্রাউন্ড, বলিউড— সব জায়গারই ছবি করেছি। কাজ যখন শুরু করেছিলাম তখন ইন্টারনেটের এত চল ছিল না। ধারাবাহিকের শেষে আমাদের নাম দেখাত। সেখান থেকে মানুষ আমাদের চিনত। কিন্তু এখন দর্শক আমাদের চরিত্রের নামে চেনে। পার্বতীর চরিত্র করে আমাকে যা ট্রোল হতে হয়েছে, বা বলা ভাল যে রকম আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছি, তা আগে কখনও হয়নি।”

দর্শকদের চোখে শুরু থেকেই পার্বতীর চরিত্রটি যেন একেবারে ‘খলনায়িকা’। কিন্তু অভিনেত্রী কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধারণার সঙ্গে একেবারেই একমত নন। তাঁর যুক্তি, “পার্বতী যা করেছে, তার পিছনেও আছে তার নিজের লড়াই, নিজের যন্ত্রণার গল্প। সেই দিকটা লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় খুব সুন্দরভাবে ধারাবাহিকে তুলে ধরেছেন। আসলে তথাকথিত প্রগতিশীল দর্শক খুব সুন্দরভাবে পর্দায় দেওর-বৌদির প্রেমের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে। তাই কোথাও গিয়ে পার্বতীর আগমন তাদের ভাল লাগেনি।”

তবু এত বিতর্ক, এত ঘৃণা কেন? — প্রশ্ন তুলেছেন কমলিকা। তাঁর মতে, “দর্শক যদি শুধু পার্বতীকে গালাগাল করত, আমি বুঝতাম। কিন্তু তারা আমায় নোংরা ভাষায় আক্রমণ করছে। আমার চরিত্র, আমার চেহারা নিয়ে জঘন্য সব কথা বলছে। আমি তো পার্বতী নই। এই কথাটা বুঝেও এই ইচ্ছাকৃত আক্রমণ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা মেয়েরা অনেক খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার। কিন্তু এই চরিত্র করে যে এত ঘৃণা পাব, তা ভাবতে পারিনি। আমাকে তো বটেই, এমনকি লীনাদিকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাকে না সরালে নাকি দর্শক ধারাবাহিক দেখবে না। অথচ আমরাই আবার স্লট লিডার।”

‘এক আকাশের নীচে’ ধারাবাহিকের হাত ধরে জনপ্রিয়তা পান কমলিকা। তার আগেও যদিও ছোট পর্দায় কাজ করেন। এরপর পরিধি বিস্তার হয় থিয়েটার, ছবি, ওটিটি-তে। পর্দায় তাঁর ‘সাহসিকতা’ নিয়ে আজও চর্চা হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণও যেন থামে না! কখনও চরিত্রের জন্য, কখনও মতের কারণে, বিতর্ক যেন তাঁর নিত্যসঙ্গী। ‘পার্বতীর’ কথায়, “সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যারা আক্রমণ করে, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মহিলা। বাকি ১০ শতাংশ হয়তো পুরুষ। যারা ব্যকরণ মেনে শুদ্ধ বানানে আমাকে নিয়ে নোংরা কথা লেখে, তাদের আমি তথাকথিত শিক্ষিত বলেই ধরে নিচ্ছি। কিন্তু এই ধরনের ভাষার মাধ্যমেই তাদের আসল পরিচয় পাওয়া যায়। আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তো সকলেই সাংবাদিক। কিছু পেজ নানা ধরনের বিতর্কিত পোস্ট করে, সেই আক্রমণ আরও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু তাদের আমি জানাতে চাই আমার বয়স, চেহারা বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনও লজ্জা বা সঙ্কোচ নেই। একজন শিল্পী হিসাবে আমি সব ধরনের কাজ করে যাব।”

আপাতত নতুনের জীবন থেকে সরে গিয়েছে পার্বতী। কিন্তু সে কি আবার ফিরবে ‘চিরসখা’-য়? দর্শকদের মনে জাগছে সেই কৌতূহল। প্রশ্ন উঠতেই কমলিকা শুধু হাসলেন— উত্তর দিলেন না। নীরবতাই যেন তাঁর একমাত্র ইঙ্গিত।