জি বাংলার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকে জুটি হিসেবে দর্শক দেখছেন জিতু কামাল ও দিতিপ্রিয়া রায়কে। পর্দায় তাঁরা ‘আর্য’ ও 'অপু'র চরিত্রে দর্শকের মন জয় করেছেন। অল্প দিনের মধ্যেই সিরিয়ালপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এই ধারাবাহিক। পর্দায় 'আর্য-অপর্ণা'র কেমিস্ট্রি দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। কিন্তু পর্দার রসায়ন গাঢ় হলেও তাল কেটেছে বাস্তবে। জীতু কমলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন দিতিপ্রিয়া রায়। সোমবার রাতে একটি পোস্ট করে অভিনেত্রী জানান, তাঁকে নানা সময় নানা আপত্তিজনক মেসেজ পাঠিয়েছেন নায়ক। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন প্রকাশ্যেই।
এরপর আজকাল ডট ইনকে জীতু জানিয়েছিলেন, সহ-অভিনেত্রীকে স্নেহ করলেও আত্মপক্ষ সমর্থনের মতো তাঁর কাছে যাবতীয় স্ক্রিনশট আছে। তিনি বলেন, “নেহাতই বাচ্চা মেয়ে। তাই এরকমটা করে ফেলেছে সঠিক সময় আসুক আমিও এর জবাব দেব। সহ অভিনেত্রীর সঙ্গে তো ঠাট্টা, ইয়ার্কি করাই যায়, ও বাচ্চা মেয়ে তাই বুঝতে পারেনি।” দিতিপ্রিয়ার অভিযোগের পরেই দর্শকমহলের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়েন জীতু। অভিনেতার চরিত্র নিয়েও ওঠে সওয়াল। তার জবাবেই দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশট পোস্ট করে নিজের বক্তব্য জনসমক্ষে রেখেছেন। সেই পোস্টে অভিনেতা লেখেন ‘আমি সামনাসামনি কথা বলি না। সত্য কথা। আমি স্টুডিওতে গিয়ে নিজের কাজ ছাড়া অন্য কোন বিষয় নিয়ে চর্চা করি না।সত্য কথা।আমি হোয়াটসঅ্যাপে ওর সঙ্গে কথা বলি সত্য কথা।কিন্তু, কী কথা বলি সেটাই নিয়েই তো প্রশ্ন! এই নিন।(নিজের বাবা-মার সম্মানার্থে আমি সবার সামনে আনতে বাধ্য হলাম।) আমি সবটা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম, যদি বলেন ভুল,সরাসরি বলবেন আমি নিজেকে পাল্টে নেবো।” (পোস্টদাতার বানান অপরিবর্তিত)
এরপর ফের জিতুর বিরুদ্ধে এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ উগরে দেন দিতিপ্রিয়া। জিতুকে যেন সমর্থন জানায় নেটপাড়ার একাংশ, উল্টোদিকে অভিনেতার বিরুদ্ধেও মন্তব্য করেছেন একাধিক নেটিজেন। সওয়াল করছেন দিতিপ্রিয়ার হয়েও। তবে এখানেই চুপ করে যাননি অপরাজিত র নায়ক। সমাজমাধ্যমে ফের কোনও স্ক্রিনশট শেয়ার অথবা লম্বা কোনও পোস্ট না লিখেও যে নিন্দুকদের জবাব দেওয়া যায়, তা আকারইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। কী করে? নিজের ফেসবুক স্টোরিতে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন জিতু। ছোট্ট ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তি পাহাড়ের কোলে বয়ে চলা এক খরস্রোতা নদীর পাশে এক বসে রয়েছেন। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চ্যাটালো পাথর, ঘন জঙ্গল। নিরালা, নিঃঝুম পরিবেশ। সেই ব্যক্তি আপনমনে ঘোরাফেরা করছেন, নিজের জন্য চা বানাচ্ছেন। এককথায় একেবারে টেনশন ফ্রি। তবে লক্ষণীয় ভিডিওর আবহে ভেসে আশা কয়েকটি কথা। সেখানে শোনা যাচ্ছে, “সবাইকে জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। কতজনকে আর কত কথা বলব? কত জবাব দেব? তার থেকে এই নিজের মত বেশ আছি...”
প্রসঙ্গত, জীতু যে তাঁর এবং দিতিপ্রিয়ার কথোপকথনের স্ক্রিনশটগুলি দিয়েছেন, সেগুলিতে দেখা গিয়েছে, দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে নানা বিষয়ে তাঁর আলোচনার হয়েছে। নায়িকা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা শুনে জীতু জানতে চেয়েছিলেন তিনি প্রেগন্যান্ট কি না। নায়কের পোস্ট করা স্ক্রিনশটে দেখা যায়, দিতিপ্রিয়া সেই প্রশ্নের উত্তরও দেন। জানিয়েছিলেন,মায়ের দাঁতেক ইমপ্ল্যানটেশের জন্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া।
জীতুর বিশ্বাস, নিজের বুদ্ধিতে নয়, বরং কারও প্ররোচনাতেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ এনেছেন দিতিপ্রিয়া। তিনি লেখেন, ‘সর্বশেষে বলি,”ভিকটিম কার্ড” খেলাটা আমাদের সমাজে প্রথম নয়। অনেক উদাহরণ আছে কিন্তু এই মেয়েটির কোন দোষ নেই, এই মেয়েটি নিরপরাধ।এই মেয়েটিকে পেছন থেকে প্রবঞ্চনা দেওয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছে তারা কিন্তু এই মেয়েটির বিপদের সময় পাশে দাঁড়াবে না।প্লিজ মেয়েটিকে মেয়েটির পথে থাকতে দিন। কাজ করতে দিন।মেয়েটি ভাল।শিক্ষিত মেয়ে।’ পুরো পোস্ট জুড়ে সহ-অভিনেত্রীর নাম যদিও একটি বারও উল্লেখ করেননি তিনি। বরং ‘বাচ্চা মেয়ে’ বলেই তাঁকে সম্বোধন করেছেন বারবার।
দিতিপ্রিয়ার অভিযোগের উত্তর আদৌ জীতু দেবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অভিনেতার অনুরাগীরা। তবে জীতু নিজের কথা বলতেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অনুরাগীদের একাংশ। একজন লিখেছেন, তোমায় শ্রদ্ধা জানাই জীতুদা। আসলে কী বলো তো? ওস্তাদের মার শেষ রাতে। জানতাম, অনেকে নিজে গিয়েই কুড়ুল মারে। কিন্তু এবার দেখলাম, কুড়ুল রাখা ছিল কুড়ুল রাখা ছিল, ইনি নিজে গিয়ে পা দিয়ে দিয়েছেন।’
অন্য একজনের টিপ্পনি, ‘আপনি অনেকবার দিতিপ্রিয়াকে বাচ্চা মেয়ে বলে সম্বোধন করেছেন। এতদিন এই ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করছে। খুব ছোটো বয়স থেকে কাজ করছে। আমার মনে হয় না ও কোনও বাচ্চামো করেছে। হয় ওর কিছু সত্যি খারাপ লেগেছে অথবা কারো ইন্ধনে করেছে।’ অভিনেতার জনৈক অনুরাগী তাঁর উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘ধন্যবাদ, সবটা পরিষ্কার করার জন্য। আমি জানতাম তুমি কোনও নোংরামি করতে পারো না’।
আপাতত জীতুর প্রতি আস্থা রাখছেন তাঁর অনুরাগী। অন্যদিকে, সব ভুলে সব কিছু ভুলে 'চিরদিনই তুমি যে আমার' ধারাবাহিকের এই জুটির একসঙ্গে কাজ চলবে ফের স্বাভাবিক ছন্দে? এখন সেটাই দেখার।
