বলিউডে তারকারা যতই আলো ঝলমলে হোক, তাঁদের জীবনের কিছু অধ্যায় থেকে যায় অনেকটা আড়ালেই। যেমন ২০২২ সালে হঠাৎই রণবীর কাপুর এক টেলিভিশন শো-তে জানিয়েছিলেন যে তিনি নাকি পড়তেন অর্জুন বিজলানির সঙ্গে একই স্কুলে। সেই প্রকাশ্যে আনা তথ্যেই চমকে উঠেছিল দর্শকরা। অনেকেই জানতেন না যে টেলিভিশনের জনপ্রিয় নায়ক আর বলিউডের সুপারস্টার একই মাঠে একসঙ্গে দৌড়েছেন, একই ক্লাসে পড়েছেন।

সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করলেন অর্জুন। তিনি বললেন, “আমরা দু’জনেই বোম্বে স্কটিশ স্কুলে পড়তাম। ফুটবল খেলতাম রেড হাউসের হয়ে। রণবীরের নিজের একটা গ্রুপ ছিল, আমি সেই দলে ছিলাম না। তবু আমাদের বন্ধুত্ব ছিল, কারণ আমরা একই ব্যাচে ছিলাম, একসঙ্গে খেলতাম।”

অর্জুনের কথায় উঠে আসে আরেকটি মধুর স্মৃতি—শুটিংয়ের ফাঁকে হঠাৎই একদিন দেখা হয়ে যায় রণবীরের সঙ্গে। কিছুক্ষণ কথা হয়। পরে আবার দেখা হয় যখন রণবীর তাঁর একটি ছবি প্রচারের জন্য পৌঁছন এক শো-তে, যেটির সঞ্চালক ছিলেন অর্জুন। সেখানে চমক দিলেন রণবীর নিজেই। কোনও স্ক্রিপ্ট ছাড়াই স্টেজে দাঁড়িয়ে বললেন—“অর্জুন আর আমি ছোটবেলা থেকেই একে অপরকে চিনি। একই স্কুল, একই ক্লাস, এমনকী একই ফুটবল হাউসে খেলেছি আমরা। আজ ওকে এত সুন্দরভাবে সঞ্চালনা করতে দেখে আমার দারুণ লাগছে। ও বাবা হয়েছে, এত কিছু করছে—এটা ভীষণই আনন্দের।”

দর্শকেরা মুহূর্তেই বুঝতে পারলেন—এই বন্ধুত্ব নিছক বলা নয়, বরং সত্যিই হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা সম্পর্ক। সেই মঞ্চেই রণবীর এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন অর্জুনকে, আর আবেগে ভেসে উঠল দৃশ্য। দর্শক-অতিথি সকলে তখন হাততালিতে ভরিয়ে দিলেন স্টুডিও।

অর্জুন নিজেও অকপটে বললেন—“রণবীর ভীষণ ভাল মানুষ। খুব কম কথা বলে, নিজের মতো থাকে। অভিনেতা হিসেবে আমি ওকে দারুণ ভালবাসি। এই জীবনে অন্তত আমরা স্কুল-ফ্রেন্ড ছিলাম, এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি।”

অর্জুনের বক্তব্যের মতোই—তখন যদিও সকলে জানতেন যে রণবীর, ঋষি কাপুরের ছেলে। কিন্তু অল্প বয়সে সেই পরিচয়ের কোনও বাড়তি গুরুত্ব ছিল না তাঁদের কাছে। স্কুলের মাঠে তখন সবাই কেবল খেলোয়াড়, কেবল বন্ধু। আর আজ, এক দশক পর, সেই স্কুলবন্ধুত্বের অনাবিল স্মৃতি পৌঁছে গেছে দর্শকের মনেও।

অন্যদিকে, ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই চর্চায় রয়েছে পরিচালক নীতেশ তিওয়ারির ‘রামায়ণ’। প্রায়শই এই ছবি নিয়ে নিত্যনতুন তথ্য সামনে আসছে। নীতেশের ছবিতে রাম ও সীতার চরিত্রে অভিনয় করছেন যথাক্রমে রণবীর কপূর ও সাই পল্লবী। লক্ষ্মণ হিসাবে পর্দায় হাজির হবেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা রবি দুবে। অন্য দিকে, রাবণের চরিত্রে থাকছেন ‘কেজিএফ’ খ্যাত অভিনেতা যশ। এ ছাড়াও হনুমানের চরিত্রে দেখা যাবে সানি দেওলকে। তা ক্যামেরার পিছনে মানুষ হিসাবে কেমন রণবীর? সন্ধান দিলেন তাঁর 'ছোট ভাই' রবি। 


রবি দুবের কথায়, “রণবীর অসম্ভব দয়ালু। ওঁর মতো এত দয়ালু ও নরম স্বভাবের মানুষ নিজের জীবনে আর দু'টি দেখিনি। তার উপর যেমন ভদ্র তেমন নম্র। একটা কথা এখানে বলতে চাই, যখন কেউ হঠাৎ করে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়, তাঁরা যেখানে যায় সম্মান পান, ভালবাসা পান। ফলে স্বভাবতই তাঁদের নিজের কাজের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে যায় কয়েকশো গুণ। সেই সঙ্গে তাঁরা অলিখিত সুবিধা পান নিজেকে ইচ্ছেমতো মানুষের সামনে পেশ করার। অনেক তারকা সেসব করতে বেশ আনন্দ-ই পান। কিন্তু রণবীর অন্য ধাতুতে গড়া। আজও সব মানুষের প্রতি তাঁর ব্যবহার সমান থাকে, সবার সঙ্গে তাঁর নম্র ব্যবহার চোখ টানতে বাধ্য। নিজের কাজকে আজও যেভাবে গুরুত্ব দেন, তা অভাবনীয়। শুটিংয়ের প্রতিটি ছোট ছোট বিষয়ে তাঁর লক্ষ্য থাকে। আমার কাছে রণবীর ভাই সত্যিই একজন বড় দাদার মতো। ওঁকে যেমন শ্রদ্ধা করি ততটা ভালবাসি।”