আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমল ফের। জুন মাসে খুচরো মূদ্রাস্ফীতির হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২.১ শতাংশে। ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর যা সর্বনিম্ন। সোমবার এই সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। দেশ জুড়ে পর্যাপ্ত বর্ষণের কারণে মুদ্রাস্ফীতির হার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাচ্ছ্যন্দ সীমার কাছাকাছি রয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, ভোক্তা মূল্য সূচক (কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স) ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি মে মাসে ২.৮২ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের জুন মাসে ৫.০৮ শতাংশ ছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে।
জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (এনএসও) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুনের তুলনায় ২০২৫ সালের জুন মাসের সিপিআই-এর ভিত্তিতে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ২.১ শতাংশ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "২০২৫ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২৫ সালের জুন মাসে মুদ্রাস্ফীতি ৭২ বেসিস পয়েন্ট কমেছে। এটি ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর বছরের পর বছর সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি।” ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১.৯৭ শতাংশ।
এনএসও জানিয়েছে যে ২০২৫ সালের জুন মাসে মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতির উল্লেখযোগ্য হ্রাস মূলত শাকসবজি, ডাল এবং পণ্য, মাংস এবং মাছ, সিরিয়াল, চিনি এবং মিষ্টি, দুধ এবং পণ্য এবং মশলার দাম কমে যাওয়ার ফলে হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে মুদ্রাস্ফীতির হার ৪ শতাংশে (উভয় দিকেই ২ শতাংশ মার্জিন সহ) নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খুচরা মুদ্রাস্ফীতির হার কম হওয়ায় ফেব্রুয়ারি থেকে মূল স্বল্পমেয়াদী ঋণের হার ক্রমশ ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।

খুচরো মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি পাইকারি ভোক্তা সূচকেও (WPI) নিম্নমুখী হতে দেখা গিয়েছে। গত জুনে এটি -০.১৩ শতাংশে নেমে যায়। শেষ ২১ মাসের নিরিখে যেটা সর্বনিম্ন। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর আর কখনইও পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির সূচক আর কখনই এতোটা নামেনি বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রক। মে মাসে WPI-ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ০.৩৯ শতাংশ। গত বছরের জুন মাসে এটি ছিল ৩.৪৩ শতাংশ।
শিল্প মন্ত্রক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, "২০২৫ সালের জুন মাসে মুদ্রাস্ফীতির নেতিবাচক হার মূলত খাদ্যদ্রব্য, খনিজ তেল, মৌলিক ধাতু, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদির দাম হ্রাসের কারণে হয়েছে।"
আরও পড়ুন: ১০ বছর আগেই বদ্ধ ঘরে মরে-গলে-পচে গিয়েছে ব্যক্তি! পাড়ার ছেলে বল আনতে ঘরে ঢুকে যা দেখে ফেলল
WPI তথ্য অনুসারে, জুন মাসে খাদ্যদ্রব্যের মূদ্রাস্ফীতি ৩.৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যেখানে মে মাসে ১.৫৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যেখানে শাকসবজির দাম তীব্র হ্রাস পেয়েছে। NSO-এর CPI তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জুন মাসে খাদ্যদ্রব্যের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের জুনের তুলনায় (-) ১.০৬ শতাংশ ছিল।
গ্রামাঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতি জাতীয় গড়ের তুলনায় কম ছিল ১.৭২ শতাংশ, যেখানে শহরাঞ্চলে এটি ছিল ২.৫৬ শতাংশ বেশি। সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি ছিল তেলেঙ্গানায় (-০.৯৩ শতাংশ) এবং সর্বোচ্চ কেরালায় (৬.৭১ শতাংশ)। সারা ভারতের ভিত্তিতে, বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি শাকসবজি (-১৯ শতাংশ), 'মাংস ও মাছ' (-১.৬২ শতাংশ), 'ডাল ও পণ্য' (-১১.৭৬ শতাংশ) এবং মশলা (-৩.০৩ শতাংশ) এর ক্ষেত্রে নেতিবাচক।
সিপিআই তথ্যের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে, আইসিআরএ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার বলেন, মুদ্রস্ফীতির হার কমার প্রধান কারণ খাদ্য ও পানীয়। তিনি বলেন, “সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি টানা অষ্টম মাসের জন্য জুন ২০২৫-এ প্রত্যাশার চেয়েও কম ২.১ শতাংশে নেমে এসেছে। যা ২০২৫ সালের মে মাসে ছিল ২.৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারী তুলনায় সর্বনিম্ন। আমরা ২০২৫ সালের আগস্টে আরবিআইয়ের সভায় ফের ২৫ বিপিএস হার কমানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না।“
ইলারা ক্যাপিটালের অর্থনীতিবিদ এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গরিমা কাপুর জানান, জুন মাসে সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, যার মূল কারণ খাদ্যের দামের হ্রাস। তিনি বলেন, "আমরা আশা করছি পুরো বছরের সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি আরবিআইয়ের গোটা বছরের অনুমান ৩.৭% এর নীচে থাকবে। তাই বর্ষা শেষ হওয়ার পরে আবারও সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।"
