আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিকল্পনা করছে ক্রেডিটে কেনা মোবাইল ফোনের ঋণগ্রহীতা যদি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন তবে ব্যাঙ্ক সেই ফোন লক করে দিতে পারবে।
২০২৪ সালে হোম ক্রেডিট ফাইন্যান্সের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে ইলেকট্রনিক্সের এক-তৃতীয়াংশের বেশি, যার মধ্যে মোবাইল ফোনও রয়েছে, ছোট আকারের পার্সোনাল লোনের মাধ্যমে কেনা হয়। টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই (TRAI)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১.১৬ বিলিয়নেরও বেশি, যা বাজারের গভীরতাকে দেখায়।
আরও পড়ুন: দক্ষ কর্মীকে ছাঁটাই করার শাস্তি, চাকরি গেল দুই বসের
দ্য মিন্ট সূত্রে খবর, গত বছর আরবিআই ঋণগ্রহীতারা কিস্তি না দিলে তাদের ফোন লক করার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বলেছিল। তখন ঋণ প্রদানের সময় একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ ইনস্টল করা হত, যা ব্যবহার করে ডিভাইস লক করা যেত। তবে এবার ঋণদাতাদের সঙ্গে পরামর্শ শেষে, আরবিআই তাদের ফেয়ার প্র্যাকটিসেস কোড চালু করতে চলেছে এবং নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করবে। এতে ফোন লক করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পরিষ্কার নিয়মাবলি থাকবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ লক করার আগে ঋণগ্রহীতার অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে ফোন লক করা হলেও ঋণদাতারা গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের নাগাল পাবেন না। আরবিআই-এর মুখপাত্র এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই বিষয়টি এখনও সকলের কাছে পরিষ্কার করে বলা হয়নি।
যদি এই পদক্ষেপ কার্যকর হয়, তবে বাজাজ ফাইন্যান্স, ডিএমআই ফাইন্যান্স এবং চোলামান্ডালম ফাইন্যান্সের মতো প্রধান ঋণদাতারা এর সুবিধা পাবে। এতে ঋণ আদায় বাড়বে এবং কম ক্রেডিট স্কোর থাকা গ্রাহকদের কাছেও সহজে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে।

ক্রিফ হাইমার্ক নামের ক্রেডিট ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এক লাখ টাকার নিচের ঋণগুলোতেই খেলাপির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ভোক্তা টেকসই সামগ্রীর ঋণের মধ্যে নন-ব্যাঙ্ক ঋণদাতাদের অংশ প্রায় ৮৫%।
আরবিআই-এর তথ্য বলছে, ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় খাদ্যবহির্ভূত মোট ক্রেডিটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গড়ে ওঠে পার্সোনাল লোন দিয়ে। বিশেষত ফোনের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনার জন্য এই ঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তবে এই সিদ্ধান্ত যদি দ্রুত কার্যকরী করা হয় তাহলে সেখান থেকে হয়তো মোবাইল ফোন লোনের মাত্রা অনেকটা কমবে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্রেতা অধিকারকর্মীরা সতর্ক করেছেন যে এই পরিবর্তন কার্যকর হলে লাখো মানুষ শোষণের শিকার হতে পারেন। ক্যাশলেসকনজিউমার নামের একটি ভোক্তা অধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকান্ত এল. বলেন, “এই প্রক্রিয়া আসলে অত্যাবশ্যক প্রযুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আচরণগত অনুগত্য চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। ফোন লক হয়ে গেলে মানুষ জীবিকা, শিক্ষা ও আর্থিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবে, যতক্ষণ না তারা কিস্তি শোধ করছে।”
