আজকাল ওয়েবডেস্ক: এখনকার দিনে স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে সচেতনতা যেমন বেড়েছে, তেমনি চিকিৎসা খরচও আকাশছোঁয়া হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ মানুষই আজ বীমা নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তবে সমস্যার জায়গা হল—অনেকেই নীতির খুঁটিনাটি অংশ, বিশেষত শর্তাবলি ও ধারা ভালোভাবে না বোঝার কারণে দাবি করার সময় বিপাকে পড়েন।
 
 পলিসি ডকুমেন্টে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারা যেমন কো-পে, ডিডাক্টিবলস এবং রুম ভাড়া সীমা লুকিয়ে থাকে। এগুলো প্রথমদিকে নজরে না পড়লেও, হাসপাতালে ভর্তি হলে দাবি নিষ্পত্তি বা বীমা কোম্পানির প্রদান করা অর্থে বড় প্রভাব ফেলে।
 
 কো-পেমেন্ট (Co-Pay)
 
 কো-পেমেন্ট হল এমন একটি ধারা, যেখানে বীমাধারীকে প্রতিটি দাবি করা খরচের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিজেকেই বহন করতে হয়। সাধারণত এর ফলে প্রিমিয়াম কিছুটা কম হয়, কিন্তু আসল সমস্যায় পড়তে হয় জরুরি অবস্থায়।
 
 ধরা যাক, আপনার পলিসিতে ২০% কো-পে ধারা রয়েছে। যদি হাসপাতালের বিল ৫,০০,০০০ হয়, তাহলে বীমা কোম্পানি দেবে ৪,০০,০০০ এবং বাকি ১,০০,০০০ আপনাকেই দিতে হবে। প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে কো-পে হার অনেক বেশি রাখা হয়, যা প্রথমে সস্তা মনে হলেও পরে মারাত্মক আর্থিক চাপ তৈরি করে।
 
 ডিডাক্টিবলস (Deductibles)
 
 ডিডাক্টিবল মানে হল, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ প্রথমে নিজেকেই বহন করতে হবে, তারপর বীমা কোম্পানির কভারেজ শুরু হবে। সাধারণত টপ-আপ বা সুপার টপ-আপ পলিসিতে এই ধারা বেশি থাকে।
 
 উদাহরণস্বরূপ, আপনার পলিসিতে যদি ৫০,০০০ ডিডাক্টিবল ধারা থাকে, তবে প্রথম ৫০,০০০ টাকার বিল আপনাকেই দিতে হবে। এর পরে বীমা কোম্পানি বাকিটা বহন করবে। যদিও এই ধরনের পলিসির প্রিমিয়াম কম হয়, কিন্তু জরুরি পরিস্থিতিতে বীমাধারীর হাতে সবসময় এই টাকা প্রস্তুত থাকতে হবে।
 
 রুম ভাড়া সীমা (Room Rent Cap)
 
 রুম ভাড়া সীমা হল হাসপাতালে প্রতিদিনের সর্বোচ্চ রুম ভাড়া, যেটা পর্যন্ত বীমা কোম্পানি খরচ বহন করবে। এর বেশি হলে অতিরিক্ত টাকা বীমাধারীকেই দিতে হয়।
 
 ধরা যাক, আপনার পলিসিতে প্রতিদিনের রুম ভাড়া সীমা ৫,০০০, অথচ আপনি ৮,০০০ ভাড়ার রুম নিলেন। তাহলে ওই অতিরিক্ত ৩,০০০ আপনাকেই দিতে হবে। শুধু তাই নয়, অনেক সময় রুম আপগ্রেড করলে অন্যান্য খরচেও প্রোপোরশনেট কাটতি হয়। ফলে পুরনো বা অপর্যাপ্ত সীমা ভবিষ্যতে কভারেজকে কমিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: ছোট সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ: সুদের হারে শীর্ষে এই স্কিম
 
 কীভাবে এড়াবেন এই ফাঁদগুলো?
 
 প্রথমেই পলিসি ডকুমেন্ট ভালোভাবে পড়ুন এবং শর্তাবলি পরিষ্কারভাবে বুঝে নিন।
 
 বিভিন্ন হাসপাতালের রুম ভাড়া সীমা যাচাই করে সেই অনুযায়ী হাসপাতাল বেছে নিন।
 
 কো-পে শতাংশ খেয়াল করুন—যদি ঘন ঘন চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, তবে উচ্চ কো-পে ধারা এড়িয়ে চলুন।
 
 যদি ডিডাক্টিবলস থাকে, তবে সবসময় জরুরি তহবিলে ওই পরিমাণ টাকা জমা রাখুন।
 
 উচ্চ প্রিমিয়ামের কিছু পলিসিতে রুম ভাড়া সীমা থাকে না—বাজেট মেনে এই ধরনের পলিসি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
 
 প্রয়োজনে বীমা কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করুন বা এমন ডিজিটাল টুল ব্যবহার করুন, যা সহজভাবে শর্ত ও ক্লেম প্রসেস ব্যাখ্যা করে।
 
 মেডিক্যাল ইনফ্লেশন বা চিকিৎসা খরচের ক্রমবর্ধমান চাপের যুগে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যবীমা নেওয়াই যথেষ্ট নয়। বীমার ধারা, শর্তাবলি, এবং এক্সক্লুশন আগে থেকে ভালোভাবে বোঝা জরুরি। কারণ অজান্তে স্বাক্ষর করা চুক্তি পরে পরিবারকে ভোগাতে পারে বড় আর্থিক ক্ষতি। তাই সঠিকভাবে বোঝা এবং পরিকল্পনা করাই দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক শান্তি নিশ্চিত করবে।
