আজকাল ওয়েবডেস্ক: আপনার আয়কর রিফান্ড এখনও অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি? আপনি একা নন। বহু করদাতাকেই প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যদিও আয়কর বিভাগ ইতিমধ্যেই বিপুল সংখ্যক ছোট অঙ্কের রিফান্ড নিষ্পত্তি করেছে।
সিস্টেমগত যাচাই ও ভ্যালিডেশন প্রক্রিয়া কিছু ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে বড় অঙ্কের রিফান্ডের ক্ষেত্রে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ দেরির মূল কারণ করদাতাদের ফাইলিংয়ের সময় করা কিছু সাধারণ কিন্তু এড়ানো সম্ভব ভুল।
আয়কর আইনের ১৪৩(১) ধারা অনুযায়ী, FY 2025–26-এর জন্য দাখিল করা রিটার্ন প্রক্রিয়াকরণ করতে আয়কর দফতরের হাতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত সময় রয়েছে। আবার ২৪৫(২) ধারার অধীনে, আগের কোনও করবকেয়া যাচাইয়ের প্রয়োজন হলে রিফান্ড সাময়িকভাবে আটকে রাখা যেতে পারে। তবুও, অনেক ক্ষেত্রেই দেরির জন্য দফতরের চেয়ে করদাতার ভুলই বেশি দায়ী। এমনকি এই ভুলগুলো ২৪৪এ ধারার অধীনে রিফান্ডে প্রাপ্য সুদের অঙ্কও কমিয়ে দিতে পারে।
এখন দেখা যাক, রিফান্ড দেরি হওয়ার পেছনে থাকা পাঁচটি সাধারণ আইটিআর সংক্রান্ত ভুল এবং সেগুলো কীভাবে দ্রুত ঠিক করা যায়।
সময়ের মধ্যে আইটিআর ভেরিফাই না করা
রিটার্ন দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে আইটিআর ভেরিফাই না করা রিফান্ড দেরির সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভেরিফিকেশন না হলে রিটার্নকে অবৈধ হিসেবে ধরা হয়, অথবা দেরিতে ভেরিফাই হলে সেটি বিলম্বিত রিটার্ন হয়ে যায়। এর ফলে প্রসেসিং পিছিয়ে যায় এবং রিফান্ড আটকে থাকে। যাঁরা সময়সীমা মিস করেছেন, তাঁদের অবশ্যই দ্রুত ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে—এবং অবশ্যই ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর আগে।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আপডেট বা ভ্যালিডেট না থাকা
শুধুমাত্র প্যানের সঙ্গে যুক্ত, ই-ফাইলিং পোর্টালে প্রি-ভ্যালিডেট করা ও সক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই রিফান্ড পাঠানো হয়। অনেক সময় করদাতারা আগে ভ্যালিডেট করা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন বা ব্যাঙ্ক মার্জারের পর নতুন আইএফএসসি কোড আপডেট করতে ভুলে যান। এর ফলে রিফান্ড ব্যর্থ হয়। সঠিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আপডেট ও ভ্যালিডেট করলে এই সমস্যা সহজেই এড়ানো যায়।
ডিফেক্টিভ রিটার্নের নোটিস উপেক্ষা করা
রিটার্নে কোনও ত্রুটি ধরা পড়লে আয়কর বিভাগ ১৩৯(৯) ধারায় নোটিস পাঠায়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই ত্রুটি সংশোধন না করলে রিটার্ন অবৈধ বলে গণ্য হয়। দেরিতে জবাব দিলেও প্রসেসিং বিলম্বিত হয়। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ত্রুটি সংশোধন করা অথবা যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
টিডিএস তথ্যের গরমিল
টিডিএস সংক্রান্ত ভুল থেকেই রিফান্ড সংক্রান্ত সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অনেক সময় কর কাটা হলেও কর্তৃপক্ষ তা জমা দেয় না বা সঠিকভাবে টিডিএস স্টেটমেন্ট ফাইল করে না। অনেক করদাতা AIS না দেখে রিটার্ন দাখিল করেন এবং পরে সমস্যায় পড়েন। AIS ভালোভাবে মিলিয়ে দেখা, ডিডাক্টরকে ভুল সংশোধনের অনুরোধ করা এবং প্রয়োজনে রেক্টিফিকেশন রিকোয়েস্ট দেওয়া দীর্ঘ বিলম্ব এড়াতে সাহায্য করে।
অস্বাভাবিক ছাড় বা ডিডাকশন দাবি করা
রিটার্নে দাবি করা ছাড় বা ডিডাকশন সন্দেহজনক মনে হলে দফতর অতিরিক্ত যাচাই চাইতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এই দাবি একেবারেই বৈধ, যেমন—নিয়োগকর্তার প্রুফ জমা দেওয়ার সময়সীমা আগেই শেষ হওয়া বা কর ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণে। প্রয়োজনীয় নথি দ্রুত জমা দিলে স্ক্রুটিনি ও রিফান্ড দেরি এড়ানো সম্ভব।
সব মিলিয়ে বলা যায়, একটু সচেতন থাকলেই রিফান্ডের অধিকাংশ দেরি এড়ানো যায়। সময়মতো রিটার্ন ভেরিফাই করা, ব্যাঙ্ক তথ্য আপডেট রাখা, নোটিসের দ্রুত জবাব দেওয়া এবং ফাইল করার আগে AIS যাচাই করা—এই ছোট পদক্ষেপগুলোই নিশ্চিত করতে পারে, আপনার প্রাপ্য রিফান্ড যেন সময়মতো ও পুরো অঙ্কেই অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়।
