আজকাল ওয়েবডেস্ক: আইটিআর ফাইলিংয়ের ১৬ সেপ্টেম্বরের শেষ তারিখ পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই মাস। ইতিমধ্যে অনেক করদাতা তাঁদের রিফান্ড পেয়ে গেছেন, কিন্তু এখনো একাংশ করদাতা রয়েছেন যারা প্রতিদিনই ব্যাংক অ্যাপ বা আয়কর পোর্টাল রিফ্রেশ করছেন — এই আশায় যে, কবে তাঁদের রিফান্ডের টাকা জমা হবে।
এই অপেক্ষারত করদাতাদের মনে একটাই প্রশ্ন— সরকার কি দেরিতে পাওয়া রিফান্ডের ওপর সুদ দেয়? যদি দেয়, তবে কতটা?
আয়কর আইনের ধারা ২৪৪এ (Section 244A) অনুযায়ী, যদি কোনো করদাতার রিফান্ড পাওনা থাকে এবং সেটি বিলম্বিত হয়, তবে তিনি প্রতি মাস বা মাসের অংশবিশেষের জন্য ০.৫ শতাংশ হারে সাধারণ সুদ পাওয়ার অধিকারী। অর্থাৎ, যদি করদাতার রিফান্ড ট্যাক্স দপ্তরের কারণে বিলম্বিত হয়, তবে বছরে মোট ৬% হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। তবে এটি সাধারণ সুদ, চক্রবৃদ্ধি নয় — অর্থাৎ আগের সুদের ওপর আবার নতুন সুদ যোগ হয় না।
সাধারণ সুদে কীভাবে গণনা হয়?
ধরা যাক, একজন করদাতার ২০,০০০ টাকা রিফান্ড পাওনা ছিল এবং তিন মাস দেরিতে রিফান্ড পেলেন। তাহলে সুদের হিসাব হবে — ২০,০০০ × ০.৫% × ৩ = ৩০০ টাকা। অর্থাৎ, করদাতারা বিলম্বের সময়কাল অনুযায়ী সীমিত কিন্তু ন্যায্য পরিমাণ সুদ পান।
কখন দেরি হলেও সুদ পাওয়া যায় না
সবক্ষেত্রে দেরিতে রিফান্ড মানেই সুদ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেরির দায় কার উপর। যদি রিফান্ডে দেরি করদাতার ভুলের কারণে হয় — যেমন ভুল তথ্য, অসম্পূর্ণ রিটার্ন, বা আয়কর বিভাগের নোটিসে দেরিতে সাড়া দেওয়ার কারণে — তাহলে কোনো সুদ দেওয়া হয় না।
তাছাড়া, Section 140A অনুযায়ী স্ব-মূল্যায়িত কর (Self-Assessment Tax) পরিশোধের পর যদি শুধুমাত্র অতিরিক্ত পরিশোধের ফলে রিফান্ড পাওনা হয়, সে ক্ষেত্রেও সুদ প্রযোজ্য নয়। এছাড়া, যদি রিফান্ডের পরিমাণ ১০০ টাকার কম হয়, তাহলে আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, কোনো সুদ দেওয়া হবে না।
সিবিডিটি (CBDT)-র নতুন নিয়ম
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (CBDT) রিফান্ড প্রসেসিং আরও কার্যকর করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে। CBDT Notification No.155/2025 অনুযায়ী, বেঙ্গালুরু সিপিসি (CPC) এখন Section 154-এর অধীনে রিফান্ড-সংক্রান্ত ভুল সংশোধন ও বকেয়া ট্যাক্সের বিপরীতে রিফান্ড সমন্বয়ের ক্ষমতা পেয়েছে।
কেন রিফান্ড আটকে যায়?
সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল তথ্য অসামঞ্জস্যতা। করদাতার রিটার্নে দেওয়া তথ্য ও সরকারি রেকর্ড (যেমন Form 26AS, AIS, বা TIS)-এর মধ্যে পার্থক্য থাকলে রিফান্ড আটকে যেতে পারে। এছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রি-ভ্যালিডেট না হওয়া, প্যান–আধার লিঙ্ক না থাকা, স্ক্রুটিনিতে থাকা কেস, বকেয়া ট্যাক্স দাবি, বা প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণেও দেরি হতে পারে।
রিফান্ড বা সুদ না পেলে কী করবেন?
প্রথমে আয়কর ই-ফাইলিং পোর্টালে লগইন করে রিফান্ড স্ট্যাটাস যাচাই করুন। দেখুন, সব ট্যাক্স ক্রেডিট সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কি না এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভ্যালিডেট করা আছে কি না। যদি ব্যাংক সংক্রান্ত কারণে রিফান্ড ব্যর্থ হয়, তাহলে অনলাইনে ‘Refund Re-issue’ অনুরোধ করতে পারেন।
রিফান্ডের পরিমাণ ভুল হলে বা সুদ যোগ না হলে Section 154-এর অধীনে অনলাইন Rectification Request দাখিল করা যায়। এছাড়াও, e-Nivaran পোর্টালে অভিযোগ জানানো বা সরাসরি বেঙ্গালুরুর CPC অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব।
দেরিতে রিফান্ড এলে সরকার সুদ দেয়, তবে তা নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষ এবং সাধারণ সুদের ভিত্তিতে। করদাতাদের উচিত তথ্যের সঠিকতা ও ব্যাংক সংযোগ যাচাই করা, যাতে রিফান্ড প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।
