আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুধবার সোনার দাম নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম প্রথমবারের মতো ১.২২ লক্ষ অতিক্রম করেছে। বিশ্বের অনিশ্চয়তা, দুর্বল মার্কিন ডলার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে আবারও সোনার দিকে টেনে এনেছে।
বুধবার সকালে MCX-এ ডিসেম্বর ডেলিভারির সোনার ফিউচার ০.৮৬% বেড়ে প্রতি ১০ গ্রামে ১,২২,১৬৫-এ পৌঁছায়, যা এপর্যন্ত সর্বোচ্চ। রুপার দামও ১.১৪% বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজিতে ১,৪৭,৪৫০ হয়েছে। এটি প্রথমবারের মতো সোনার ১.২২ লক্ষ সীমা পেরোনো, যা সারা বছর ধরে চলা শক্তিশালী মনোভাবকে প্রতিফলিত করছে।
ট্রেডারদের মতে, এই উত্থানের পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির শক্তিশালী ক্রয়, গোল্ড ইটিএফ-এ স্থিতিশীল বিনিয়োগ প্রবাহ এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য দুটি সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত। একটি অক্টোবর এবং অন্যটি ডিসেম্বর মাসে।
আরও পড়ুন: ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রতিনিধি দলকে আটকানো হয়েছে, পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা: কুণাল ঘোষ
বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক কারণ এই রেকর্ড ভাঙা উত্থানকে উসকে দিয়েছে। মার্কিন সরকারের শাটডাউন এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে। এটি বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, ইউরোপে বিশেষত ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দুর্বল ডলারের কারণে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির ধারাবাহিক স্বর্ণ ক্রয়, সম্ভাব্য সুদহার হ্রাস এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি এড়িয়ে সোনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এবছর এখন পর্যন্ত দেশীয় বাজারে সোনার স্পট প্রাইস ৫৫% বেড়েছে যা সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম তীব্র বৃদ্ধি।
মার্কিন সরকার শাটডাউনের কারণে অর্থনৈতিক তথ্যপ্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে, আবার জাপান ও ফ্রান্সে রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে সোনার দিকেই ঝুঁকছেন।”
এখন সোনা কেনা উচিত নাকি বিক্রি?
এটাই এখন বিনিয়োগকারীদের বড় প্রশ্ন। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সোনার দাম এবছর আরও কিছুটা বাড়তে পারে, যদিও মুনাফা তোলার কারণে স্বল্পমেয়াদে সামান্য সংশোধন আসতে পারে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ অক্টোবর ও ডিসেম্বরে প্রতিবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদহার কমাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যা সোনার দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। পাশাপাশি, বাড়তে থাকা রাজনৈতিক উত্তেজনা ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ডলারকে চাপে রাখছে। এটিও সোনার জন্য ইতিবাচক সংকেত।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এখনই তাড়াহুড়ো করে বেশি দামে কিনে ফেলার চেয়ে দামের পতনে ধীরে ধীরে ক্রয় করাই ভালো। যারা এই বছরের শুরুর দিকে কম দামে সোনা কিনেছিলেন, তাঁরা চাইলে এখন আংশিক মুনাফা তুলতে পারেন।
রেকর্ডমূল্য সোনার ঋণ বাজারকেও চাঙা করেছে। ICRA-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠিত সোনা ঋণ শিল্প ২০২৬ সালের মার্চ নাগাদ ১৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছাতে পারে যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে এক বছর আগেই। ২০২৭ সালের মার্চ নাগাদ তা আরও বাড়িয়ে ১৮ ট্রিলিয়ন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনা এখনও নিরাপদ বিনিয়োগ হলেও অতিরিক্ত দামে কেনার আগে কৌশলগতভাবে ভাবা জরুরি। যারা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা খুঁজছেন, তাঁদের জন্য ধীরে, নিয়মিত বিনিয়োগই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাৎক্ষণিক লাভের আশায় দৌড় না দেওয়াই ভালো।
