আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের ধনতেরাসে ভারতের জুয়েলারি বাজারে সোনা আবারও ইতিহাস গড়েছে। উৎসবের সিজনে দেশজুড়ে সোনার চাহিদা তুঙ্গে, আর সেই সঙ্গে বেড়েছে দামও। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ ক্যারেট সোনার দাম দেশের বড় শহরগুলোতে গড়ে প্রতি ১০ গ্রামে পৌঁছেছে রেকর্ড ১,৩৪,৮০০। পরে সামান্য কমে দাম স্থিত হয়েছে—মুম্বইয়ে ১,৩২,৭৭০, দিল্লিতে ১,৩২,৯২০ এবং চেন্নাইয়ে ১,৩৩,০৯০ টাকায়। অন্যদিকে, ২২ ক্যারেট সোনার দাম শহরভেদে ১,২১,৭০০ থেকে ১,২২,০০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎসবের আমেজের বাইরে আরও গভীর অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে। চলতি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর সোনা কেনার প্রবণতা, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর আশঙ্কা এবং বিপুল পরিমাণে ETF বিনিয়োগ—সব মিলিয়ে বিশ্বের বাজারে সোনার দাম পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।


ইউরো প্যাসিফিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনৈতিক ও কৌশলবিদ পিটার শিফ সতর্ক করে বলেছেন, “পরিস্থিতি ক্রমেই গুরুতর হচ্ছে” এবং “কিছু বড় কিছু ঘটতে চলেছে।” তিনি মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা, ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য রেট কাট এবং অক্টোবর ২০২৫-এ সোনার ঐতিহাসিক উত্থান—সবকিছুই ভবিষ্যৎ বাজার অস্থিরতার ইঙ্গিত বহন করছে।

আরও পড়ুন: তিতিবিরক্ত হলেও জেলেনস্কির ওতেই মজে ট্রাম্প, সবার সামনেই করলেন ভূয়সী প্রশংসা, দেখুন ভিডিও


অর্থনীতিবিদরা আরও বলছেন, ধনতেরাসে সোনার এই উত্থান কেবল উৎসবের উচ্ছ্বাস নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির গভীরে লুকিয়ে থাকা উদ্বেগের প্রতিফলন। ২০২৫ সালে ধনী দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান আর্থিক ঘাটতি, সরকারি ঋণের বোঝা এবং অতি উত্তপ্ত AI শেয়ারবাজার নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা অনেকটা ২০০০ সালের ডটকম বুদবুদের মতো পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।


এই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা আবারও সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছেন। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং বন্ডের অনিশ্চিত আয়ের কারণে বিনিয়োগকারীরা রক্ষাকবচ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। গোল্ডম্যান স্যাকস, এইচএসবিসি এবং এএনজেড-এর মতো শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করছে যে ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে।


ভারতে, যেখানে সোনা শুধু বিনিয়োগ নয় বরং ঐতিহ্যের অংশ, সেখানে এই দাম বৃদ্ধিও মানুষের উৎসাহে জল ঢালতে পারেনি। ধনতেরাস সবসময়ই সম্পদ, সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাই আকাশছোঁয়া দামের মধ্যেও মানুষ ভিড় করছেন জুয়েলারি দোকানে, কেউ কিনছেন সোনার গয়না, কেউ বা ডিজিটাল গোল্ড ও কয়েন।


বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা ভারতীয় সমাজের আর্থিক বাস্তবতা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। মানুষ একদিকে উৎসব পালন করছে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে সম্পদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করছে।
সব মিলিয়ে, ২০২৫ সালের ধনতেরাসে সোনার ঝলক কেবল উৎসবের নয়—এটি বিশ্ব অর্থনীতির অস্থির ভবিষ্যতের এক ঝলকও বটে। উৎসবের আলোয় সোনা যেমন ঝলমল করছে, তেমনি তার আড়ালে দপদপ করছে বিশ্বের বাজারের উদ্বেগের আগুন।