আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে বাড়ি কেনা কখনও শুধু অর্থনৈতিক লেনদেন নয় — এটি আবেগ, পারিবারিক আকাঙ্ক্ষা ও স্থিতিশীলতার প্রতীক। আধুনিক প্রযুক্তি, অনলাইন বুকিং ও ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও, নবরাত্রি, ধনতেরাস ও দীপাবলির মতো উৎসব ও “শুভ সময়”-এর প্রভাব এখনও গভীরভাবে প্রোথিত। এই সময়গুলোতে দেশের বিভিন্ন শহরে ও আয়ের স্তরে বাড়ি কেনার আগ্রহ বেড়ে যায় বহুগুণে।
সংস্কৃতি ও বিশ্বাস আজও প্রভাব ফেলে বাড়ি কেনার সময় নির্ধারণে। অনেকে সম্পত্তি কেনার চুক্তি, রেজিস্ট্রেশন বা গৃহপ্রবেশের তারিখ নির্ধারণ করেন শুভ মুহূর্ত দেখে। সম্পত্তি কেনা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, এটি এক মানসিক ও আধ্যাত্মিক সিদ্ধান্ত। আজকের দিনে প্রকল্পের ঝুঁকি ও বিনিয়োগের পরিমাণ এত বেশি যে মানুষ আবার ফিরে আসছে ভারতের প্রাচীন জ্ঞানব্যবস্থায়। প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষ সম্পত্তি কেনার আগে বাস্তু বা জ্যোতিষের পরামর্শ নেন। ক্রেতার জন্মতথ্য ও সম্পত্তির বাস্তু অনুসারে সময় নির্ধারণ করলে কেনাকাটা মসৃণ ও শুভ হয়।
ভারতীয় সমাজে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জীবনের বড় সিদ্ধান্তগুলি — বিয়ে, ব্যবসা শুরু বা বাড়ি কেনা — শুভ দিনেই নেওয়া হয়েছে। ভারতীয়রা বরাবরই শুভ উপলক্ষের সঙ্গে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে যুক্ত করে। নবরাত্রি ও দীপাবলি শুধু উৎসব নয়, শুভ সূচনার প্রতীক। পরিবারের একত্রতা, পূজা ও আশীর্বাদের আবহে এই সময়ে বাড়ি কেনা মানে সমৃদ্ধি ও মানসিক শান্তির আশ্বাস।
আরও পড়ুন: ভাঙছে টাটা গোষ্ঠী? রতন টাটা থাকলে কী করতেন
এই বিশ্বাস কেবল ছোট শহর বা ঐতিহ্যবাহী পরিবারেই নয়, এনআরআই ও নগর পেশাদারদের মধ্যেও সমানভাবে টিকে আছে। ডেভেলপাররা ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি গ্রাহক আগমন ও বিক্রয় রূপান্তর হার লক্ষ্য করেন। উৎসবের আবহ ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বাজারে এক অনন্য গতি আনে। উৎসবকালে আমরা সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি সাইট ভিজিট ও অনলাইন লিড পাই। ক্রেতারা বোনাস, ছুটি ও ডেভেলপারদের অফার মিলিয়ে পরিকল্পনা করেন — ফলে আবেগ ও বাস্তব প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করে।
উৎসব মানেই অফার — তবে আজকের ক্রেতা শুধু বিজ্ঞাপনী ছলনায় নয়, প্রকৃত সুবিধা খোঁজেন। স্ট্যাম্প ডিউটি ছাড়, রেজিস্ট্রেশন ফি হ্রাস, নমনীয় পেমেন্ট প্ল্যান বা নিশ্চিত ভাড়া — এসব অফার বাস্তব আর্থিক সুবিধা দেয় এবং ক্রেতার দ্বিধা কমায়।
আজকের ক্রেতা আবেগ ও অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য খোঁজেন। তারা সুদের হার, ডেভেলপারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রকল্পের লাভজনকতা যাচাই করেন। মর্টগেজ হার স্থিতিশীল ও রেরা (RERA) স্বচ্ছতা বাড়াচ্ছে — ফলে উৎসবকালীন চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। মহামারির পর মানুষ বাড়ি কেনাকে বিনিয়োগ নয়, প্রয়োজন ও নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করছে। আজ উৎসবকালীন চাহিদা মূলত নিজ ব্যবহারের জন্য বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেই বেশি। পরিবারের ভবিষ্যৎ, স্থায়িত্ব ও আরামের কথা ভেবেই ক্রেতারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
উৎসবের আবেগ, আর্থিক প্রস্তুতি ও আকর্ষণীয় অফারের মেলবন্ধনে ভারতে আজও “শুভ সময়ে বাড়ি কেনা” শুধু ঐতিহ্য নয় — এটি অর্থনৈতিক ও মানসিক ভারসাম্যের প্রতীক।
