মিল্টন সেন, হুগলি: হঠাৎ করে আসা জোয়ারের জলে হল বিপত্তি। গঙ্গার চরে খেলতে গিয়ে আটকে পড়ল দুই নাবালক। লঞ্চ নিয়ে গিয়ে দু'জনকে উদ্ধার করল পুলিশ। ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে আজ, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ শ্রীরামপুর থানার অন্তর্গত ছিন্নমস্তা ঘাট এলাকায়। এদিন গঙ্গার ঘাটে খেলা করছিল ১১ ও ১৩ বছর বয়সি দুই নাবালক। দু'জন ঘাট সংলগ্ন এলাকায় খেলা করছিল। সেসময় গঙ্গায় ভাটা ছিল। জল না থাকায় তারা কম জলে কিছুটা হেঁটে যায়। তারপর প্রথমে কিছুটা সাঁতরে গঙ্গার মাঝে থাকা চরে গিয়ে পৌঁছয়।
সেখানে গিয়ে বেশ কিছু সময় ধরে খেলতে থাকে দুই নাবালক। তার পর হঠাতই গঙ্গায় জোয়ার চলে আসে। হু হু করে বেড়ে যায় গঙ্গার জল। সেই চরে আটকে পড়ে দুই নাবালক। ফেরার চেষ্টা করেও বিফল হওয়ায় দু'জন সেখানেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। গঙ্গার পাড়ে তখন উপস্থিত স্থানীয়দের বিষয়টি নজরে পড়ে। তখন তারাও সেই দুই নাবালকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কার্যত কোনও ভাবেই উদ্ধার সম্ভব হয় না।
অবশেষে খবর দেওয়া হয় শ্রীরামপুর থানার পুলিশকে। শ্রীরামপুর থানার পুলিশের তরফে সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে জানানো হয়। কিন্তু বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হতে থাকে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আসতে দেরি হচ্ছে দেখায় বিপদ বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় তৎপরতার সঙ্গে লঞ্চ নিয়ে গিয়ে দুই নাবালককে উদ্ধার করে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। খবর দেওয়া হয় দুই নাবালকের বাড়িতে। পুলিশের তরফে তাদের অভিভাবকদের হাতে সুস্থ অবস্থায় নাবালকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে হুগলির মাহেশের সুরকি ঘাটে। স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ী, যিনি এলাকায় বুড়ো নামে পরিচিত, গঙ্গায় স্নান করতে নেমে জলে তলিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক (এসডিও) শম্ভুদীপ সরকার, এসিপি শুভঙ্কর বিশ্বাস, শ্রীরামপুর ও রিষড়া পুরসভার দুই পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা ও বিজয় সাগর মিশ্র এবং শ্রীরামপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান অমিয় মুখার্জি। প্রতিনিধিদল ঘাট এলাকা ঘুরে দেখেন এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পরবর্তীতে এসডিও শম্ভুদীপ সরকার জানান, সাময়িকভাবে সুরকি ঘাটটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই ঘাটে এখন থেকে কেউ স্নান বা অন্য কোনও কাজ করতে পারবেন না। সুরকি ঘাট গঙ্গার একটা বিপজ্জনক বাঁকে আছে। তাই স্রোতের টান বেশি। বারবার এখানে জলে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।’
উল্লেখ্য, গত তিন মাসে এই ঘাটেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে গঙ্গায় ডুবে। গত ২৫ মে চার নাবালক স্নান করতে নেমে ডুবে যায় সুরকি ঘাটে। মঙ্গলবার এক ব্যবসায়ী তলিয়ে গেলেন। বারবার এমন দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে স্থায়ীভাবে ঘাটটি কীভাবে আরও নিরাপদ করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি উঠেছে।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে উত্তরপাড়া থানার অন্তর্গত কোন্নগর বারোমন্দির গঙ্গার ঘাটে স্নান করতে নেমে গঙ্গায় তলিয়ে গেল দুই স্কুল ছাত্র। স্পিড বোট নিয়ে তল্লাশি চালায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কোন্নগর অ্যালকালি মাঠে খেলতে আসে কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া। খেলা শেষ হয়ে গেলে একসঙ্গে পাঁচ জন ছাত্র কোন্নগর বারো মন্দির ঘাটে গঙ্গাস্নান করতে যায়। স্নান করতে করতে হঠাৎই দু'জন তলিয়ে যায়। তিনজন উঠে গেলেও বাকি দু'জন আর জল থেকে উঠতে পারেননি।
