আজকাল ওয়েবডেস্ক: আরাবল্লি পাহাড়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রায় আপাতত স্থগিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার এই বিষয়ে শুনানি করে আদালত জানায়, আগের রায়ে ব্যবহৃত সংজ্ঞা নিয়ে একাধিক অস্পষ্টতা রয়েছে এবং সেগুলি স্পষ্ট করা জরুরি। তাই নতুন করে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে ২১ জানুয়ারি, ২০২৬।
প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি জে কে মহেশ্বরী এবং বিচারপতি এ জি মাসিহের বেঞ্চ সোমবার এই নির্দেশ দেয়। আদালত জানায়, আগের কমিটির সুপারিশ এবং সেগুলির ভিত্তিতে দেওয়া আদালতের সিদ্ধান্ত আপাতত কার্যকর থাকবে না। কেন্দ্র সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকেও এ বিষয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
শুনানিতে কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, আদালতের নির্দেশেই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং তার রিপোর্ট আদালত গ্রহণ করেছিল। তবে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের মতে, পাহাড় ও রেঞ্জের সংজ্ঞা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই বিভ্রান্তি দূর করতে স্বাধীন পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন।
আদালত বিশেষভাবে খতিয়ে দেখতে চেয়েছে, গত মাসে অনুমোদিত সীমিত বা সংকীর্ণ সংজ্ঞা কার্যকর হলে আরাবল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায় খনন কার্যক্রমের সুযোগ বেড়ে যেতে পারে কি না। এমনকি নিয়ন্ত্রিত বা সীমিতভাবে খনন হলেও তার ফলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না, সেটিও নতুন কমিটিকে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান ও গুজরাত জুড়ে বিস্তৃত আরাবল্লি পাহাড় নিয়ে অবৈধ খনন সংক্রান্ত এক মামলায় ২০২৪ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট লক্ষ্য করেছিল যে বিভিন্ন রাজ্য “আরাবল্লি পাহাড়” শব্দটির ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা ব্যবহার করছে। এই প্রেক্ষিতেই একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি অক্টোবর মাসে রিপোর্ট জমা দিয়ে প্রস্তাব করে যে, স্থানীয় ভূখণ্ডের তুলনায় ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার জমিকে আরাবল্লি পাহাড় বলা হবে এবং ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত দুই বা ততোধিক এমন পাহাড় মিলেই আরাবল্লি রেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
গত ২০ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই সংজ্ঞাগুলি গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে কোর বা ইনভায়োলেট এলাকায় খনন নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও পুরো আরাবল্লি জুড়ে সম্পূর্ণ খনন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। আদালতের যুক্তি ছিল, সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে অবৈধ খনন ও খনি-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বাড়তে পারে।
এই সিদ্ধান্তের পরই পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয় এবং আরাবল্লি পাহাড়ের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করা হয়। সেই প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আবার বিবেচনায় নেয়। আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশে আপাতত আগের সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকায় আরাবল্লি পাহাড় সংরক্ষণ নিয়ে চলতে থাকা বিতর্কে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
