আজকাল ওয়েবডেস্ক: আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার ফালাকাটা টাউনের চৌপতিতে বিজেপির তথাকথিত Silent Invisible Rigging (SIR) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যের বিপুলসংখ্যক ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তীব্র আক্রমণ শানালেন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্যসভাপতি ও রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বড়াইক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কমলপ্রসাদ শর্মা, বিধায়ক সুমন কাঁজিলাল, মাদারিহাটের বিধায়ক জয়প্রকাশ টোপ্পো, তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী-সহ জেলা নেতৃত্বের অন্যান্য বিশিষ্টজন।

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে বলেন, “আমাদের রাজ্যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন। শুধু বাংলাই নয়—তামিলনাড়ু, কেরল, পুদুচেরি এবং অসমেও ভোট হবে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অসমকে SIR-এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এটি নিছকই এক নির্বাচনী চক্রান্ত।”

তিনি স্মরণ করান যে, “২০০২ সালে রাজ্যে শেষবার SIR হয়েছিল, তার আগে ২০০১ সালে হয়েছিল জনগণনা। তারপর ২০১১ সালে জনগণনা হলেও ২০২১ সালের জনগণনা আজও শুরু হয়নি। অথচ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জনগণনার কাজ না শুরু করেই SIR শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়া রাতারাতি করা যায় না—এটি এক দীর্ঘ প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া, যা সম্পূর্ণ করতে ২৪ মাসেরও বেশি সময় লাগে।”

ঋতব্রত অভিযোগ করেন, “SIR চালু করার অজুহাতে রাজ্যে এক অমানবিক পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। BLO-দের উপর অমানুষিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, কেউ কেউ স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন। মানুষ আতঙ্কে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন মানুষকে দমিয়ে রাখতে চাইছে।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বাংলায় কোনো ভোটই ছিল না, তাহলে তখন SIR করা হয়নি কেন? এখন কেন তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে? বিজেপির নেতারা এখনই দাবি করছেন এক কোটি বা দেড় কোটি নাম বাদ যাবে—এই সংখ্যা ওরা কোথা থেকে পাচ্ছে?”

তাঁর মতে, “আসলে বিজেপি মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, বিহারের মতো বাংলাতেও নাম কমানো-বাড়ানোর খেলায় নামতে চাইছে। কিন্তু ওরা ভুল করছে—বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। এক জন সত্যিকারের ভোটারের নাম বাদ গেলেও আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর ঘেরাও করব।”

SIR-এর উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে ঋতব্রত বলেন, “এই প্রক্রিয়ার আসল লক্ষ্য দুটি—প্রথমত, প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া; দ্বিতীয়ত, পিছনের দরজা দিয়ে NRC চালু করা। ইতিমধ্যেই অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এই রাজ্যের মানুষদের কাছে নোটিস পাঠাচ্ছে, অথচ তাদের কোনো এক্তিয়ারই নেই। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বিজেপি নতুন করে বাংলার মানুষকে নিজেদের ভিটেমাটিতেই পরবাসী বানানোর চক্রান্ত করছে।”

সভা থেকে বিজেপির রাজ্যবিরোধী ও বাংলা-বিরোধী রাজনীতিকেও আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী এখন বিরোধী দলনেতা, কিন্তু ভোট হলেই তাঁর সেই মর্যাদা থাকবে না। তিনি যেখানেই যান, রোহিঙ্গা দেখতে পান। অথচ মায়ানমার বা বার্মার সঙ্গে বাংলার কোনো আন্তর্জাতিক সীমান্তই নেই। মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল—এই চারটি রাজ্যের সঙ্গে মায়ানমারের সীমান্ত আছে, অথচ সেখানে SIR হচ্ছে না, হচ্ছে শুধু বাংলায়!”

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অসমে একজনকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাওয়ার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছে বিজেপি সরকার। তাহলে আমরাও যদি বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান গাই, আমাদের বিরুদ্ধেও কি মামলা হবে? বিজেপির রবীন্দ্রবিরোধী মনোভাব ও বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা আজ প্রকাশ্য।”

তৃণমূল সাংসদ এদিন দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “বাংলায় বারবার বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া আটকে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার থেকে শুরু করে গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের প্রার্থীদের জয়ী করে বিধানসভায় পাঠানোই এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য।”

সভাস্থল জুড়ে স্লোগান ওঠে—“বাংলা বাঁচাও, ভোট বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও।” তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব জানায়, আগামী দিনে আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরবঙ্গের প্রতিটি ব্লক ও শহরে SIR-এর নামে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।