আজকাল ওয়েবডেস্ক: থিওরেটিক্যাল কম্পিউটার সায়েন্সের 'নোবেল পুরস্কার' হিসেবে খ্যাত ‘গোডেল প্রাইজ’-এ ২০২৫ সালে সম্মানিত হলেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ঈশান চট্টোপাধ্যায়। এমন এক সমস্যার সমাধান করে তিনি এই পুরস্কার লাভ করেছেন, যা গত ৩০ বছর ধরে বিশ্বের প্রথম সারির গবেষকদের ধাঁধায় ফেলেছিল।

ভারতে বেড়ে ওঠা ঈশানের যাত্রাপথ শুরু আইআইটি কানপুর থেকে, যেখানে তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন। পরে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে ডেভিড জুকারম্যানের অধীনে ডক্টরেট করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর গূঢ় গবেষণা— র‍্যান্ডমনেস এক্সট্র্যাকশনের সমস্যা নিয়ে।

ঈশানের ‘এক্সপ্লিসিট টু-সোর্স এক্সট্র্যাক্টরস অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ফাংশনস’ শীর্ষক গবেষণাপত্র, যা ২০১৯ সালে জুকারম্যানের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত হয়, তাকেই এনে দেয় গোডেল প্রাইজ। এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কীভাবে দুটি দুর্বল এলোমেলো তথ্যের উৎসকে মিলিয়ে একটি নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী র্যাীন্ডমনেস তৈরি করা সম্ভব—যা তথ্য নিরাপত্তা, ক্রিপ্টোগ্রাফি, নিরাপদ যোগাযোগ এবং ডেটা কম্প্রেশনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: বাঙালির মাথায় সেরার মুকুট, কম্পিউটার সায়েন্সের নোবেল ‘গোডেল প্রাইজ’ পেলেন ঈশান চট্টোপাধ্যায়

গবেষণাটি প্রথম ২০১৬ সালে এসিএম সিম্পোজিয়াম অন থিওরি অফ কম্পিউটিং (STOC)-এ উপস্থাপিত হয়, যেখানে এটি সেরা গবেষণাপত্রের পুরস্কার পায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে Annals of Mathematics-এ প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে বহু বছর ধরে অসম্ভব বলে বিবেচিত একটি তাত্ত্বিক বাধাকে ভেঙে দেয় এবং তত্ত্ব ও বাস্তব প্রযুক্তির মধ্যে এক নতুন সেতুবন্ধন তৈরি করে। ঈশানের অন্যান্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের স্লোয়ান রিসার্চ ফেলোশিপ, ২০২১ সালে NSF ক্যারিয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৯ সালের NSF CISE রিসার্চ ইনিশিয়েশন অ্যাওয়ার্ড। 


এই অসাধারণ সাফল্যে গর্বিত তাঁর পরিবার। ‘আজকাল’-এর প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপচারিতায় ঈশানের পিতা  বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ঈশান পড়াশোনায় গভীর মনোযোগী ছিল। কখনও অতিরিক্ত পড়ত না, কিন্তু যতটুকু পড়ত খুব মন দিয়ে পড়ত। খুব তাড়াতাড়ি শিখতে পারত। ও যে একদিন বিজ্ঞানী হতে পারে, সেটা আমি ও আমার স্ত্রী  আত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায় দু’জনেই বুঝেছিলাম ছোটবেলায় ওকে ম্যাথস শেখাতে গিয়ে। আমাদের দু’জনেরই সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থাকায় ওকে শেখাতে সুবিধে হয়েছিল।”

তিনি আরও জানান, “স্কুলে ক্লাস ১-এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় ওর নাম প্রথমে না দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে দেখি ক্লাস ২-এর তালিকায় শীর্ষে। বিশাখাপত্তনমের ডিপিএস স্কুলে স্পিড চাইল্ড টেস্টে টপ করেছিল। মিডিয়ায় খবর হয়েছিল—‘নতুন স্পিড চাইল্ড’ শিরোনামে। আমি কলেজ স্ট্রিট থেকে ওর বয়সের তুলনায় কঠিন ম্যাথসের বই কিনে দিতাম, ও খুব সহজে সেগুলো আয়ত্ত করে নিত। পরীক্ষায় ওর নম্বর দেখে অন্য ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস নড়ে যেত।”

ঈশানের একের পর এক কৃতিত্ব তাঁদের গর্বিত করেছে, বলেই জানান তিনি। “আইআইটি ক্লিয়ার করা, পিএইচডি পাওয়া, সেরা পিএইচডি থিসিস অ্যাওয়ার্ড, বিদেশে গবেষণার ডাক, এবং ২০২৪ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ওয়াশিংটন ডিসিতে হেল্ড প্রাইজ পাওয়া—এসবই আমাদের বিস্মিত করে। সাধারণত এই পুরস্কার একটু বেশি বয়সে মানুষ পেয়ে থাকেন।”

শেষে ঈশানের পিতা বলেন, “আমি চাই ঈশান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করুক। মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণায় নতুন ভাবনা ও নতুন পথ দেখাক।” বিশ্বের বিজ্ঞান জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠেছেন ঈশান চট্টোপাধ্যায়। তাঁর এই অর্জন শুধু পরিবারের নয়, গোটা ভারতীয় প্রবাসী সমাজেরই গর্বের বিষয়। বিশ্ববিজ্ঞানের পরিবর্তমান মানচিত্রে ভারতীয়দের অনন্য অবদানের আরেকটি উজ্জ্বল প্রমাণ তিনি।