আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ ছয় মাসের উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা আর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নিজের বাড়িতে ফিরলেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি ও তাঁর নাবালক সন্তান। শনিবার সকালে বীরভূমের পাইকর থানা এলাকার দর্জিপাড়ায় পা রাখতেই আবেগে ভাসল গোটা এলাকা। সোনালীকে এক নজর দেখতে ভিড় জমায় প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতরা। দীর্ঘদিন ধরে যে আশঙ্কা, আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কেটেছে, আজ তা অনেকটাই হালকা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৪ জুন দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সোনালী বিবি-সহ দুই পরিবারের মোট ছয়জন। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশি’ অভিযোগ করে গত ২৬ জুন অসম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়। পেশায় কাগজ কুড়িয়ে সংসার চলত সোনালীদের। অথচ সমস্ত পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগই পাননি বলে অভিযোগ। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সোনালী বিবিকে বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। পরে বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। আদালত স্পষ্টভাবে এক মাসের মধ্যে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের পরও প্রশাসনিক জটিলতায় দীর্ঘদিন বাংলাদেশে আটকে থাকতে হয় সোনালী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
অবশেষে কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের আদালত শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করে সোনালীকে মুক্তি দেয়। তবে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে সঙ্গে সঙ্গে ভারতে ফিরতে পারেননি সোনালী ও তাঁর নাবালক সন্তান। শেষপর্যন্ত শুক্রবার মালদার মহদীপুর সীমান্ত দিয়ে তাঁদের ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শনিবার বীরভূমে তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হয়।
বীরভূমে ফিরলেও সোনালীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাঁর জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল চেকআপ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, আপাতত তাঁরা শুধু চান সোনালী ও তাঁর অনাগত সন্তানের সুস্থতা। পাশাপাশি দ্রুত বাকিদেরও দেশে ফেরার বন্দোবস্ত হোক, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন সকলে।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করছেন এলাকাবাসী। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও আইনিভাবে পাশে না দাঁড়ালে হয়তো এই প্রত্যাবর্তন সম্ভব হত না। দীর্ঘ ছয় মাসের মানসিক যন্ত্রণা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার যন্ত্রণা এখনও দগদগে, তবু বাড়ির উঠোনে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সোনালী।
শেষমেশ প্রতিবেশীদের কথায় ধরা পড়ে সেই স্বস্তির সুর। এ প্রসঙ্গে সোনালীর প্রতিবেশী রোহন আলি বলেন, দিল্লিতে বাংলা ভাষা কথা বলার ফল যে এত ভয়ংকর হবে তা ভাবতেই পারছি না। সোনালী ও তাঁর পরিবারের কী অবস্থা গিয়েছে ভাবলেই শিউরে উঠছি। তবে রাজ্য সরকার যেভাবে সোনালীর মতো সাধারণ পরিবারের মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনও ভাষা নেই। রাজ্য সরকার পাশে না থাকলে হয়তো সোনালী ফিরতেও পারত না। দীর্ঘদিন পর ওদের দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে। বাকিরাও সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে ফিরে আসুক—এটাই এখন উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা। আর এক প্রতিবেশী, সালমা বিবি বলেন, সোনালীর পরিবারের পাশাপাশি আমরা প্রতিবেশীরাও গত ছয় মাস ধরে উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। যা পরিস্থিতি তাতে বাইরে কাজে গেলে বাংলায় আর কথা বলা যাবে না। এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা কেন্দ্র সরকারের সেটা মাথায় রাখা উচিত। সোনালীর ফিরে আসার পুরো কৃতিত্বই রাজ্য সরকারের।
